তেঁতুলিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাদাঁবাজী, ক্ষমতার অপব্যবহার ওদুনীতির অভিযোগে প্রশাসনের শোকজ
প্রকাশ : 2025-05-19 19:10:39১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে। শালবাহান ইউনিয়নবাসীর পক্ষে মো. খলিলসহ ওই ইউনিয়নের আরও ৫০ জন ব্যক্তি গত [১২ মে) তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের [ইউএনও) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ দিকে উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শনিবার [১৭ মে) উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু স্বাক্ষরিত একটি ব্যাখ্যা প্রদানের নোটিশ [শোকজ) চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের নামে জারি করা হয়েছে। নোটিশে তাকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার [ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ ধারার [৪) (খ) উপ-ধারা অনুযায়ী পরিষদ ও রাষ্ট্রের জন্য হানিকর এবং অসদাচরণ তথা ক্ষমতা অপব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত কুশাসন ও নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের দায়ে চেয়ারম্যান পদ হতে অপসারণের সুপারিশ করা হতে পারে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম উপজেলার শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান৷ তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনীত ও নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন৷ এছাড়াও তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লিখিত অভিযোগে অভিযোগকারীদের দাবী, আশরাফুল ইসলাম বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার প্রত্যক্ষ সহায়তায় ভোটকেন্দ্র দখল করে অবৈধভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের আগে ও পরে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন৷ জানা যায়, এ্যাকুয়া ব্রিডার্স লিঃ কোম্পানী থেকে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয় এবং তিনি ৭ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর, তিনি ইউনিয়নের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য থেকে একসঙ্গে দুই বছরের রাজস্ব আদায় করে ইউপি সদস্যদের সঙ্গে মিলে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগকারীদের লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন৷ এছাড়া উক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের আদর্শ কর তফসিল অনুসরণ না করে কৃষিসহ অন্যান্য পন্যের উপর নিজের ইচ্ছেমত কর আরোপ করে শালবাহান হাটে জনরোষ সৃষ্টি করা, জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা, ভোটকেন্দ্রের গোপনীয়তা লংঘন করে নিজের ও মার্কিং সিলসহ ব্যালট পেপারের সেলফি তুলে ফেসবুক প্রচার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে যা সেসময় পত্রপত্রিকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অপরদিকে জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার টাকা সঠিকভাবে বিতরণ না করে বড়অঙ্কের অর্থ নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করেন বলেও অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার সময় সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও, টিসিবি কার্ডের পণ্য নিজে উত্তোলন করে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। গত ২৬ এপ্রিল [রোববার) টিসিবি পণ্য বিতরণের সময় চেয়ারম্যানের অনুমতিতে ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন [পোচকু) প্রায় ১৫টি পণ্যের প্যাকেট ভ্যানে তোলে দেন, যা স্থানীয়রা ধরে ফেলেন। এ বিষয়ে অভিযোগ করলে চেয়ারম্যান স্থানীয়দের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, “তোমরা আটকানোর কে? কিছু করার থাকলে করো।” একইদিন ২নং ওয়ার্ড কৃষক দলের সভাপতি আব্দুল খলিল ও হোটেল কারিগর আ. রাজ্জাকের পণ্য জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যকে দিয়ে দেয়া হয় । তারা প্রতিবাদ করলে, চেয়ারম্যান তাদের “মেরে ইন্ডিয়ায় ফেলে দেওয়ার” হুমকি দেন বলে দাবি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী খলিল বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি সাধারণ জনগণের ওপর সন্ত্রাসী আচরণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন ইউনিয়নবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার বিরুদ্ধে আমরা ইউএনও মহাদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমি আশাবাদী৷ অন্যদিকে রাজ্জাক বলেন, আমরা ভোট দিয়ে একজন সেবক চেয়েছিলাম, কিন্তু পেয়েছি একজন জুলুমবাজ সন্ত্রাসী লোক।