ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে স্যার ফজলে হাসানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
প্রকাশ : 2025-12-19 18:13:51১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
স্যার ফজলে হাসান আবেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। ‘তরুণ আবেদ: সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাসের সম্মিলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে স্যার ফজলের তরুণ বয়সের সিদ্ধান্ত, মূল্যবোধ ও নৈতিক দৃঢ়তার নানা দিক উঠে এসেছে, যা পরবর্তীকালে তাঁকে উন্নয়ন খাতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে একটি প্যানেল আলোচনায় ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘জ্ঞানার্জনের প্রতি স্যার ফজলে হাসান আবেদের আজীবন কৌতূহল ছিল। যা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, নিজের মধ্যে এই কৌতূহল সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদের মধ্যেও তা সঞ্চারিত করা প্রয়োজন। তরুণ প্রজন্মের মাঝে সেই একই অনুসন্ধানী মনোভাব ও জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যাতে তরুণেরা সৃজনশীল, মূল্যবোধসম্পন্ন ও সাহসী নেতৃত্বে পরিণত হয় এবং সমাজের পরিবর্তনশীল চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।”
ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ সবসময় নিজের হৃদয় যা চেয়েছে, সেটাই অনুসরণ করতেন। বাবার সেই দর্শনকে অনুসরণ করে আমি নিজের জীবনেও সফলতা পেয়েছি।’
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, আবেদ ভাই বলতেন, নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে আমাদের অস্তিত্বের কারণ কী। অন্য কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। এই প্রশ্নের উত্তর পেলে জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যাবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, আবেদ ভাই কথা কম বলতেন, কিন্তু যা বলতেন তা হতো খুবই অর্থবহ। তিনি কখনোই ব্যক্তিগত সুনামের জন্য কাজ করতেন না, মানবসেবাই ছিল তাঁর কাজের প্রধান উদ্দেশ্য।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক, গবেষক ও কলামিস্ট আফসান চৌধুরী, ব্র্যাকের এক্সিলারেটিং ইম্প্যাক্ট ফর ইয়ং ওমেনের (এআইএম) পরিচালক পরমা হোসেইন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার তাওহীদ আনোয়ার এবং ১৭তম সমাবর্তনের ভ্যালেডিক্টোরিয়ান রানা তাবাসসুম।
আলোচনায় নতুন প্রজন্মের ভাবনা ও আবেদ ভাইয়ের জীবন নিয়ে অনেক কথা উঠে আসে।
তরুণ বক্তারা বাংলাদেশ ও বিশ্বের জন্য তাদের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন।
আফসান চৌধুরী বলেন, আবেদ ভাই উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন। তবুও মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা তার ভেতরেই ছিল। এই সেবার মনোভাব সবার মধ্যেই থাকে। শুধু সঠিক অনুপ্রেরণা দরকার।
অনুষ্ঠানে স্কট ম্যাকমিলানের লেখা ফজলে হাসান আবেদের জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ ‘হোপ ওভার ফেইট’ এর নির্বাচিত অংশ পাঠ করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রক্টর ড. রুবানা আহমেদ।
স্যার ফজলের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। গদ্য, কবিতা, ভিজ্যুয়াল আর্টসহ নানা মাধ্যমে ফজলে হাসান আবেদকে চিত্রিত করেন শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার সেরা ছয়জন শিক্ষার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেন আসিফ সালেহ্, তামারা হাসান আবেদ ও প্রফেসর ফারহাত আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে “যদি আবেদ ভাই এখানে থাকতেন” নামে একটি নাটিকা পরিবেশন করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যান্ড থিয়েটার ফোরাম। তরুণ আবেদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের কাল্পনিক ও সৃজনশীল কথোপকথনের পর্বটি ছিল দারুণ উপভোগ্য। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশনা করেন মনন ক্লাবের শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে স্যার ফজলেকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজেসের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা এবং তাঁর সহধর্মিণী লেডি সৈয়দা সারওয়াত আবেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স এর সিনিয়র ডিরেক্টর মৌটুসী কবীর এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আজওয়াদ মোস্তাফিজ আদর।
২০১৯ সালের ২০শে ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।