যেসব জায়গায় নামাজ পড়া নিষেধ

প্রকাশ : 2025-05-12 13:33:08১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

যেসব জায়গায় নামাজ পড়া নিষেধ

সালাত একটি সুনির্দিষ্ট প্রকৃতির ইবাদত যার পদ্ধতি ‘ইসলামী শরী‘আতে পরিপূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে। নামাজ ‘তাকবিরে তাহরিমা’ দ্বারা শুরু হয় ও ‘সালাম ফিরানো’ দ্বারা শেষ হয়’।

নামাজ [সালাত] ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন৷ নামাজ প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধি-জ্ঞান সম্পন্ন, নারী পুরুষ নির্বিশেষে, প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ বা অবশ্যকরণীয়।

পবিত্র কুরআনের ১৮ টি আয়াতে বলা হয়েছে সালাত প্রতিষ্ঠা করো।

সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি আছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—

আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলার কারণে এর কোনোটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ [সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪২০]


নামাজের জন্য পবিত্র জায়গার প্রয়োজন হয়। যেকোনো পবিত্র জায়গায় নামাজ পড়া যায়। রাসুল [সা.] বলেন— আমার [উম্মতের] জন্য ভূপৃষ্ঠকে মসজিদ [ঘোষণা দেওয়া হয়েছে] ও পবিত্র করা হয়েছে। [বুখারি, হাদিস : ২৯৭৭]

পৃথিবীর সব পবিত্র স্থানে পড়া গেলেও কিছু স্থানে নামাজ পড়া নিষেধ। স্থানগুলো হলো—

হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি স্থানে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন— ময়লা ফেলার স্থানে, কসাইখানায়, কবরস্থানে, চলাচলের রাস্তায়, হাম্মামে (গোসল খানায়), উটের আস্তাবল এবং বায়তুল্লাহর ছাদের উপর। [তিরমিজি, ইবনে মাজা।]

কবরস্থান ও গোসলখানা 

আবু সাঈদ খুদরি [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেন, ‘গোটা জমিন মসজিদ [তথা সালাতের স্থান] শুধু কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া।’ [আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯২]

উট বাঁধার স্থান 

উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করা যাবে না। বারা ইবনে আজিব [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সা.]-কে উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘তোমরা উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করবে না। কারণ সেটি শয়তানের আড্ডাখানা। 

অতঃপর তাঁকে ছাগল বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করার কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘তোমরা তাতে সালাত আদায় করতে পারবে। কারণ তা বরকতময়।’ [আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৩]

আজাবের স্থান 

আগের জাতির ওপর আজাবের স্থানে সালাত আদায় করা যাবে না। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন—

‘তোমরা এসব আজাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ছাড়া প্রবেশ করবে না। কান্না না এলে সেখানে প্রবেশ করো না, যেন তাদের ওপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের প্রতিও আসতে না পারে।’ [বুখারি, হাদিস : ৪৩৩]

ইবনে ওমর [রা.] বলেন, যখন নবী করিম [সা.] হিজর [সামুদ গোত্রের বস্তি] অতিক্রম করেন, তখন তিনি বলেন—

যারা নিজ আত্মার ওপর অত্যাচার করেছিল তাদের আবাসস্থলে কান্নাকাটি ছাড়া প্রবেশ কোরো না, যেন তোমাদের প্রতি শাস্তি আপতিত না হয়, যা তাদের প্রতি হয়েছিল। তারপর তিনি তাঁর মস্তক আবৃত করেন এবং অতি দ্রুতবেগে চলে ওই উপত্যকা অতিক্রম করেন। [বুখারি, হাদিস : ৪৪১৯]

বিদ্বানগণের মতে, আজাবের স্থানে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ।

ইমাম নববি [রহ.] বলেন, আজাবের স্থানে নামাজ পড়া সবার ঐকমত্যে হারাম।

ব্যস্ত রাস্তায় নামাজ পড়া

ব্যস্ত রাস্তা, যেখানে যানবাহন চলাচল করে, সেখানে মানুষকে কষ্ট দিয়ে নামাজ না পড়া উত্তম। তবে যদি রাস্তার এক পাশে হয় এবং মানুষের চলাচলে অসুবিধা না হয় তাহলে সেখানে সালাত আদায় করা যাবে। এ ছাড়া পরিত্যক্ত রাস্তায় সালাত আদায় করা যাবে। তা ছাড়া জরুরি প্রয়োজন যেমন—জুমা ও ঈদের সালাতে জায়গা সংকুলান না হলে রাস্তায় আদায় করা যাবে।

জনগণের চালাচলে বিঘ্ন না ঘটলে রাস্তায় নামাজ পড়া যাবে। আবু সাঈদ খুদরি [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন—

তোমরা রাস্তায় বসা সম্পর্কে সতর্ক হও। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাতে না বসে তো আমাদের উপায় নেই। আমরা তথায় বসে আলোচনা করে থাকি। রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেন, যদি তোমাদের একান্ত বসতেই হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবিরা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসুল, রাস্তার হক কী? তিনি বলেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা।’ [বুখারি, হাদিস : ৬২২৯]