রমজান মাস সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসার মাস
প্রকাশ : 2024-03-30 13:44:01১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রোজা’রা মাস নিঃসন্দেহে একটি পবিত্র মাস রমজানের পবিত্রতা রক্ষাকরা সকল মুসলিম এর দ্বায়িত্ব। ইসলাম একটি সুন্দর ও সহজ ধর্ম যা মানুষের জীবন কে সহজ করে দিয়েছে। ইসলাম কখনো কারোর উপর জুলুম করে না এর জন্য রয়েছে বিধিবিধান। রোজা পালনে রোগ বৃদ্ধি পেলে পরহেজগারি মনে করে রোজা পালন করা অনুচিত। এ অবস্থায় রোজা ভাঙা জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা কোরো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু।’ [সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)
মৃত্যুমুখী বৃদ্ধলোক অথবা এমন রোগে আক্রান্ত হলে, যা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই- এমন অক্ষম ব্যক্তি প্রতিটি রোজার পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম (ফিতরার পরিমাণ) অথবা সমপরিমাণ মূল্য আদায় করবে। ইসলামের পরিভাষায় এটাকে ফিদিয়া বলা হয়। [জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২৯)
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন— শক্তিহীনদের কর্তব্য হচ্ছে ফিদিয়া দেওয়া, এটা একজন মিসকিনকে অন্নদান করা।
[সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
অতিশয় বৃদ্ধের জন্য রোজা পালন জরুরি নয়। তবে ওই ব্যক্তি অন্য কাউকে দিয়ে কাজা আদায় করাবে বা ফিদিয়া দেবে। প্রতিটি রোজার জন্য একজন মিসকিনকে এক বেলা খাবার খাওয়াবে।
রোজা পালনে অক্ষম ব্যক্তি রোজার পরিবর্তে যে দান করেন, তাকে ‘ফিদিয়া’ বলে। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান বার্ধক্যের কারণে বা অসুস্থতা অথবা অন্য যেকোনো কারণে রোজা পালনে অসমর্থ হলে এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজার কাজা আদায় করার মতো সম্ভাবনা না থাকলে তিনি প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমপরিমাণ ফিদিয়া প্রদান করবেন।
একজনের রোজা আরেকজন রাখতে পারে না, তাই ফিদিয়া রোজার পরিবর্তে রোজা নয়; ফিদিয়া হলো রোজার পরিবর্তে খাদ্য বা তার মূল্য দিয়ে দেওয়া। ফিদিয়া হলো রোজার ক্ষমতায় তার পরিবর্তে আর্থিক দান বা সদকা। তাই যাকে ফিদিয়া দেওয়া হলো, তার রোজাদার হওয়া জরুরি নয়, যেমন: নাবালেগ মিসকিন শিশু বা অতি বৃদ্ধ দুর্বল ও অক্ষম অসুস্থ অসহায় গরিব ব্যক্তি, যিনি নিজেও রোজা পালনে অক্ষম।
ফিদিয়ার পরিমাণ হলো একেকটি রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ। ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘সদকাতুল ফিতর’ হলো এক ‘সা’ [৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্য বা খাবার। আবু সাইয়িদ খুদরি [রা.) বলেন, ‘আমাদের খাদ্য-খাবার ছিল খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যব [বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪-২০৫)।’
রোজা থাকা অবস্থায় যদি রক্তে শর্করা বা ব্লাড সুগারের পরিমাণ কমে যায়, তবে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে চিনিজাতীয় খাবার খেয়ে রক্তের শর্করা বাড়াতে হবে। কারণ অতি অল্প সময়ের জন্যেও যদি মস্তিষ্কে শর্করার ঘাটতি হয় তবে সেখান থেকে হয়ে যেতে পারে স্থায়ী ক্ষতি। পরে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী ভাঙা রোজা পূরণ করে নিন।
ডায়াবেটিক্সদের সাধারণত দুই বেলা ওষুধ দেওয়া হয়। তবে যারা তিন বেলা ইন্সুলিন নেন তাদের উচ্চ মাত্রায় ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ধরনের রোগীদের রোজা রাখা সম্ভব হয় না।
রোজায় বেশি বেশি ইবাদত করতে, নামাজ পড়তে যদি কষ্ট হয় তাহলে এখনই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে আধুনিক ফিজিওথেরাপি নিলে অনেকাংশে ব্যথা বা অবসাদগ্রস্ত হতে মুক্ত থাকা যায়।
যারা মেরুদণ্ডের সমস্যা, হাঁটু-কোমড়-ঘাড় ব্যথা আর্থ্রাইটিস বা প্যারালাইসিসে ভুগছেন তাদের এই রোজায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
নামাজ সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম :
নিয়মিত নামাজ আদায় করলে ঘাড়-কোমড়-হাঁটু ব্যথা থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা যায়। আর যারা বাতের ব্যথায় আক্রান্ত তারা ব্যথার জায়গায় ৫ থেকে ১০ মিনিট কুসুম গরম পানি বা ঠাণ্ডা পানির স্যাঁক দিতে পারেন।
সায়িন্টিফিক বেইজড ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন, এতে রোজায় কোনো সমস্যা হবে না। বেশি সময় বা খতমে তারাবি নামাজ পড়তে কষ্ট হলে চেয়ারে মাঝে মাঝে নামাজ পড়তে পারেন। আর সূরা তারাবি নামাজ স্বাভাবিক নিয়মেই পড়তে পারেন।
ইফতারে চর্বি ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া মোটেও উচিৎ হবে না। পরিবর্তে ফল, শরবত বা পানীয়জাতীয় খাবার খান। এতে দ্রুত শক্তি পাওয়া যাবে।
যাদের ওজন বেশি তাদের জন্য রমজান মাস সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসার মাস। এই মাসে ওজন ৫ থেকে ১০ কেজি অনায়াসে কমিয়ে ফেলা যায়। প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
বিভিন্ন রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো পরিবর্তন করে নিলেই রোজা রাখার পাশাপাশি রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব :
রমজান মাসে রোজা রাখাই ইবাদত, কারণ তা আল্লাহর হুকুম। হাদিস শরিফে রোজাকে ইবাদতের দরজা বলা হয়েছে। রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে রাসুলুল্লাহ [সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের ওপর একটি মর্যাদাপূর্ণ মাস ছায়া বিস্তার করেছে। এ পবিত্র মাসের একটি রাত বরকত ও ফজিলতের দিক থেকে হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ মাসের রোজাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন এবং এর রাতগুলোয় আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়ানোকে নফল ইবাদত রূপে নির্দিষ্ট করেছেন। যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ফরজ ইবাদত ছাড়া সুন্নত বা নফল ইবাদত করবে, তাকে এর বিনিময়ে অন্যান্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান পুণ্য লাভ করবে।’ [বায়হাকি)
রোজা শুধু আত্মশুদ্ধির মাসই নয়, এ মাস আত্মনিয়ন্ত্রণেরও। নিজেকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত করার মাধ্যমে শরীরে প্রতিষ্ঠিত হয় শৃঙ্খলা। রোজার সময় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার বিষয়টি শরীরের ওপর যে প্রভাব ফেলে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য এ সময়ে শরীরকে চালাতে হবে ভিন্ন নিয়মে।
বিশেষ করে এ সময়ে খাবার গ্রহণে আনতে হবে বিশেষ পরিবর্তন। ঐতিহ্যগতভাবে আমরা সেহরি ও ইফতারে যেসব খাবার গ্রহণ করি সেগুলোর সবই যে যথাযথ তা কিন্তু নয়। এসব খাবারের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কিংবা পুষ্টিকর খাবার হলেও সময়োচিত নয়।
দিনের লম্বা একটা সময় যেহেতু না খেয়ে থাকতে হয় তাই সেহরি ও ইফতারে যথা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও পানি পান করা প্রয়োজন। অনেকেই সেহরি না করে রোজা রাখেন, যা ডেকে আনতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
চিকিৎসকের মতে, রমজান মাসে সুস্থ থাকতে সঠিক উপায়ে সেহরি ও ইফতার করা জরুরি। যারা সেহরি না করে রোজা রাখেন তাদের জন্য এটা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। রমজানে অনেকে পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা অথবা হজম জনিত সমস্যায় ভোগেন। আর এর সবগুলোর পেছনেই রয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
পুষ্টিবিদদের মতে, সেহরিতে সুষম খাবার খাওয়া, ধীরে ধীরে পানি পান করা উচিত। যথা সম্ভব সবজি, প্রোটিন-জাতীয় খাবার- মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ও দুধ খাওয়া উপকারী।
সারাদিনে যেহেতু পানি পান করা যাবে না তাই দেহের আর্দ্রতা নিশ্চিত করার বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। রমজানে পানি পান করতে হবে ধীরে। একবারে ও বেশি পরিমাণে পানি পান করা কিডনি বা বৃক্কের ওপরে চাপ বাড়াতে পারে। তাই সতর্ক থাকা উচিত। ইফতারে ভারী বা তেল-মসলা যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সারা দিন রোজার পরে ইফতারেও খাওয়া পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। ইফাতারে খাবার খেতে হবে ধীরে, কিছুটা সময় নিয়ে ও ভালো মতো চিবিয়ে। গরমে শরীরের ঘামে। তাই ইফতারে দেহে পানির চাহিদা পূরণ করতে তরল-জাতীয় খাবার ও পানি পান করতে হবে। এই সময় পারতপক্ষে বাইরের জুস বা কৃত্রিম পানীয় পান না করাই ভালো।
দুপুরের পর থেকে মানুষের হজম ক্রিয়া দুর্বল হতে থাকে। তাই গুরুপাক-জাতীয় ও বেশি ভারী খাবার ইফতারে খাওয়া ঠিক না। তাছাড়া এই সময় বিপাক হারও হ্রাস পায়। ইফতারে সহজপাচ্য ও কম মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। পানি বা তাজা ফলের শরবতের মাধ্যমে ইফতার শুরু করে খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।
খেজুর দেহের শর্করার পরিমাণ বাড়ায় এবং এর ‘এঞ্জাইম’ হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও অন্যান্য তাজা ফলমূল খাওয়া দেহে আঁশ, খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে।
ইফতারে প্রথমে পানি পান করে যে কোনো মিষ্টি ফল ও শরবত গ্রহণ করা ভালো। তারপর পাঁচ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মূল খাবার খাওয়া শুরু করুন। কারণ মস্তিষ্কে খাবারের সংবেদন পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। তাই ইফতার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়া করে খাবার খেলে বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় যা মোটেও ঠিক না। এতে ওজন বেড়ে যাওয়া ও শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনা থাকে।
ইফতারে পেট ঠাণ্ডা থাকে এমন খাবার, যেমন- দুধচিড়া, দই-চিড়া অথবা মুড়ি খাওয়া ভালো। দই পেট ভালো রাখে। যারা বিরিয়ানি বা তেহেরি পছন্দ করেন তাদের একটু সচেতন হওয়া উচিত। কারণ ইফতারে এসব খাবার হজমে সমস্যা করে গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই পেট গরম করে এমন খাবার খাওয়া উচিত নয়। পেটের সমস্যা এড়াতে পেট ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার খাওয়া দরকার। ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল ও তাজা ফলের রস বেশ উপকারী। এগুলো বেশি করে খেতে পারেন।
ইফতারের পর অতিরিক্ত চা বা কফি এবং কোমল পানীয় পান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চা ও কফি শরীরের পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে।
রোজার দিনে সুস্থ থাকতে আর্দ্র থাকার কোনো বিকল্প নেই। তাই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত যতটা সময় পাওয়া যায় অল্প অল্প করে পানি পান ও ফল খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো, এতে শরীর সুস্থ থাকে।
চিকিৎসকের মতে, এসময় তিনটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তা হলো, এই সময়ে খাবার ও পানির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম করতে হবে এবং যতটা বেশি সময় সম্ভব বিশ্রামে থাকতে হবে।
রমজানের সময় ইফতারির অন্তত এক ঘণ্টা পরে ব্যায়াম করা উচিত। বেশি কষ্ট করতে হয় না বা লাফঝাঁপ করতে হয় না, সেরকম ব্যায়াম করতে হবে। বিশেষ করে পেটের মাসলের, হাতের বা পায়ের ব্যায়াম করা যেতে পারে। যারা ডায়াবেটিস বা নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবে হাঁটাহাঁটি করতে চান, তাদেরও উচিত ইফতারির অন্তত এক ঘণ্টা পরে হাঁটাহাঁটি করা।
লক্ষ্য রাখতে হবে, রোজার সময় বেশি ঘাম হয় বা বুক ধড়ফড় করে এমন কোন ব্যায়াম করা যাবে না। গরমের সময় রোজা হওয়ার কারণে দিনের বেলায় কোন ব্যায়াম না করাই ভালো। তাহলে আর পানিশূন্যতার কোন ঝুঁকি তৈরি হবে না।
রমজানের সময় হালকা ব্যায়াম করা উচিত। যেমন হাত বা পায়ের হালকা ব্যায়াম, ইয়োগা জাতীয় ব্যায়াম ইত্যাদি। কেউ যদি ভারী ব্যায়াম, ওজন তোলা বা সাইক্লিং করতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ দেব ইফতারের পর এগুলো করার জন্য।
হাঁটাহাঁটি করার মতো ব্যায়াম যেকোনো সময়েই করা যেতে পারে। তবে বিকালে না হেঁটে বরং সকালে সেহরির পরপরই হাঁটাহাঁটির কাজটি করে ফেলতে পারলে ভালো। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীরা বিকালে হাঁটবেন না, কারণ এ সময় রক্তে শর্করা অনেক কমে যায়।
উচ্চরক্তচাপ যাদের আছে তারা রোজা রাখতে পারেন। তবে তাদেরকে নিয়মিত ওষধ খেতে হবে। তাহলেই তারা রোজা রাখতে পারবেন। ইউরিক এসিড থাকলে ডালের তৈরি খাবার কম খেতে হবে। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরকে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়ার নতুন তালিকা করবেন।
শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার ওপর গুরুত্ব দিন। এসব বিষয় খেয়াল রাখলে রমজানেও আপনার শরীর-স্বাস্থ্য পুরোপুরি ফিট থাকবে।
সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত সকলপ্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকছেন মুসলিমরা। রোজাদারদের খাবারের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন লাইফস্টাইলেও পরিবর্তন আসবে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যায়ামের মতো জরুরি বিষয়।
সারাদিন কোনো খাবার বা পানি না খেয়ে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এবারের রমজান হচ্ছে গরমের সময়ে, ফলে দরকার বাড়তি সতর্কতা।
রোজার সময় যারা নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করতে চান, তাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাবার রাখতে হবে। ইফতার, রাতের খাবার এবং শেষ রাতের খাবারে শর্করা জাতীয় খাবার অবশ্যই রাখতে হবে, যা থেকে দ্রুত ক্যালরি পাওয়া যাবে।
ইফতারে ডাবের পানি, ডিম, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখতে হবে। সারাদিন রোজা থাকার পর এ জাতীয় খাবার শরীরে দ্রুত শক্তি যোগাবে। এরপর রাতের খাবারে ব্রাউন রাইস, চিকেন এবং সেহরি পর্যন্ত অবশ্যই তিন থেকে চার লিটার পানি খেতে হবে। কেউ যদি মিষ্টি খাবার খেতে চান, তাহলে সেটি খাওয়া উচিত রাতের ব্যায়ামের পরে।
রোজার সময় প্রতিদিন দুপুরের পরে একটু ঘুমিয়ে নিন। তাহলে আর রোজার ক্লান্তিতে আপনার শরীর ভেঙে পড়বে না। জোহরের নামাজের পর থেকে আছরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়টি দিবানিদ্রার সবচেয়ে ভালো সময়।
গবেষণায় দেখা গেছে, রোজার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোজাদাররা অসুস্থ হয়ে পড়েন যথাযথ খাবার গ্রহণ না করার কারণে। বিশেষ করে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণেই এই অসুস্থতা দেখা দিয়ে থাকে।এর সাথে অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে কিছুটা বিপাকে ফেলে দেয়। রোজায় এই শারীরিক বিপত্তি এড়ানো খুবই সহজ বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
রোজা রাখার পর সারাদিনের খাবার একসাথে খেতে হবে এ রকম মানসিকতা থেকেই এই বিপত্তি দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞের কথা হচ্ছে, একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, পাকস্থলীর একটি নির্দিষ্ট আয়তন ও খাবার ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। শুধু এক দিন কেন, তিন দিন না খেয়ে থাকার পরও পাকস্থলী তার ধারণক্ষমতার বেশি খাবার গ্রহণ করতে পারবে না। বেশি খেলে বিপত্তি ঘটবেই। তাই এ ধরনের বিপত্তি এড়াতে গবেষকদের প্রথম উপদেশ হচ্ছে, সেহরি ও ইফতারে অতিভোজন পরিহার করা।
শরীর নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে রোজার সময় বিপাকক্রিয়ার হার কমিয়ে দেয় এবং শরীরে জমাকৃত চর্বি ক্ষুধা নিবারণে ব্যবহৃত হয়। রোজার সময় খাবারের ব্যাপারে বেশিরভাগ লোকই রুচিকর খাবার গ্রহণের দিকে বেশি মনোযোগী থাকে, কিন্তু সুষম খাবার বা ব্যালান্স ডায়েটের কথা মনে রাখেন না।
রোজায় সুস্থ থাকার জন্য সব ধরনের খাবার মিলিয়ে খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে, আটা বা চাল, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, মাছ, গোশত ও ডিম, শস্যদানা, শাকসবজি এবং সর্বোপরি ফলজাতীয় খাবার রাখা উচিত।সেহরি ও ইফতার উভয়ের পরই ফল খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে উপদেশ দেয়া হয়েছে এই গবেষণায়।
গবেষকেরা বলেছেন, রোজার খাবার যত সাধারণ হবে ততই ভালো। রোজা হচ্ছে বাড়তি ওজনসম্পন্ন লোকদের জন্য ওজন কমানোর উপায়। কিন্তু অতিভোজনের কারণে সে উদ্দেশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
রোজায় দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতে হয় বলে সেহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা গ্রহণ করা উচিত। এই জটিল শর্করা ধীরগতিতে হজম হয় এবং হজম হতে প্রায় ৮ ঘণ্টা লাগে। ফলে দিনের বেলায় ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। জটিল শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শস্যদানা বা বীজজাতীয় খাবার, অপরিশোধিত বা ননরিফাইনড আটা, ময়দা এবং ঢেঁকিছাঁটা চাল।
পরিশোধিত শর্করা দ্রুত হজম হয়ে যায় এবং রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। এ ধরনের খাবার হজমে সময় নেয় তিন-চার ঘণ্টা। তাই এ ধরনের খাবার ইফতারে গ্রহণ করা উচিত। দ্রুত হজম হয় এ ধরনের শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে রিফাইনড ময়দা ও চিনিজাতীয় খাবার। খেজুর হতে পারে ইফতারের একটি অন্যতম খাবার। খেজুর হচ্ছে চিনি, তন্তু বা ফাইবার, শর্করা, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। ইফতারে দু-তিনটি খেজুরই শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে দিতে পারে। তবে সাথে পানি পান করতে হবে প্রচুর। রোজায় সুষম খাবার পরিমাণমতো গ্রহণ করলেই শরীর সুস্থ থাকবে।
অসুস্থতার কারণে অনেকেই হয়তো রোজা রাখতে পারেন না ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। আবার অনেকে আছেন যারা হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, পেপটিক আলসার কিংবা ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে। এ ধরনের ব্যক্তিদের অনেকেই ইচ্ছা থাকার পরও রোজা রাখতে পারছেন না সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যেসব রোগ ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সম্ভব। চিকিৎসকদের মতে, এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চাইলেই রোজা রাখতে পারেন। বিভিন্ন রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো পরিবর্তন করে নিলেই রোজা রাখার পাশাপাশি রোগ নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় সম্ভব।
তৌফিক সুলতান, ইন্টার্ন শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।