লৌহজংয়ে পরকীয়ার জেরে দুই সন্তানের জননী খুন, স্বামী আটক
প্রকাশ : 2022-05-19 21:22:30১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মামী শ্বাশুড়ির সাথে স্বামীর পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় খুন হলো স্বর্না আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূ। স্বর্না আক্তার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও গ্রামের শাহজাহান ঢালীর মেয়ে। অভিযোগে জানা যায়, গত ২০১৭ সালে একই ইউনিয়নের পাশের কুড়িগাওঁ গ্রামের নুর ইসলাম বেপারীর ছেলে মো. রনি হাসানের সাথে স্বর্নার বিয়ে হয়।
বিয়ের বেশ কিছু দিন পার হলেও স্বর্নার কোন সন্তান না হওয়ায় স্বর্নার ওপর মাঝে মধ্যে চাপ সৃষ্ঠি করত হাসানের পরিবার । এমনকি তাকে তালাক দেয়ার ভয় দেখাতো হাসান। ডাক্তারের নানান চিকিৎসা শেষে স্বর্নার কোল জুড়ে যমজ দুটি সন্তান আসে। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে তাদের বয়স এখন দেড় বছর।
এলাকাবাসি জানান, স্বর্নার স্বামী রনি হাসানের অডেল টাকা পয়সা থাকায় এবং স্বর্নার বাবা একটু দুর্বল হওয়ায় রনি হাসানের পরিবার কখোনই স্বর্নাকে ভালো দৃষ্ঠিতে দেখতো না। স্বর্নার ছোট বোন রুপা জানান, বেশ কিছুদিন আগে রনি হাসানের ছোট ভাই (স্বর্নার দেবর) রবিনের সাথে তার মামী শ্বাশুড়ির আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্বর্না তার স্বামী রনিকে বিষয়টি জানায় এবং রবিনকে শাসন করতে বলেন।
এরপর থেকে স্বর্নার উপর শুরু নানান নির্যাতন। এক পর্যায়ে স্বর্না জানতে পায় রনি হাসানের সাথে ও তার মামী শ্বাশুড়ির অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বর্না ঈদের পর সন্তান দুটিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে।
আর রনি হাসানের পরিবার ভাবে রনির সাথে মামীর পরকীয়ার কথা জানতে পেরে স্বর্না তার বাবার বাড়ি চলে গেছে আর আসবে না। তাই নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে গত শনিবার রনি হাসানের পরিবার তার ছোট বোনের জামাই উজ্জল কে পাঠায় স্বর্নাকে তার বাবার বাড়ি থেকে রনিদের বাড়িতে নেয়ার জন্য। স্বর্না তার ননদের স্বামী উজ্জলের সাথে কামরাঙ্গীর চর ফিরে যায় রনিদের বাসায়।
এদিকে স্বর্না তার বাবাকে বাড়ি থেকে আম নিয়ে যেতে বলে তার বাসায়। নিহত স্বর্নার পরিবার জানায়, স্বর্নার বাবা শাহজাহান ঢালী, বুধবার সকালে মেয়ের জন্য আম, দুধ নিয়ে স্বর্নার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে কেরানীগঞ্জ পৌছালে স্বর্নার ননদের স্বামী উজ্জল স্বর্নার বাবাকে ফোনের মাধ্যমে জানায় স্বর্নার সাথে রনির ঝগড়া হচ্ছে আপনি দ্রুত বাসায় চলে আসেন।
এ খবর শুনে শাহাজাহান ঢালী খুব দ্রুত স্বর্নাদের কামরাঙ্গীর চরের বাসায় পৌছে দেখে স্বর্নারস্বামী রনি, ও তার মা, বোন ও বোনের স্বামী উজ্জল সবাই বাসার ড্রইং রুমে বসে খোশ গল্প করছে। স্বর্নার কথা জানতে চাইলে বলে স্বর্না তার রুমে আছে খোজ নেন। স্বর্নার রুমটি ভেতর দিক দিয়ে আবজানো ছিলো।
স্বর্নার বাবা দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে মেয়ের নিথর দেহ একাংশ মাটিতে লুটিয়ে পরেছে আর গলাটি ফ্যানের সাথে ওড়না লাগিয়ে ঝুলছে। এ অবস্থা দেখে সে অনেকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
বিষয়টি জানানো হয় সকল আত্মীয় স্বজনকে। এরপর কামরাঙ্গীর চর থানায় নেয়া হয় স্বর্নার লাশ। পুলিশ মামলাটি নিতে প্রথমে গড়িমশি করে এরপর বৃহস্পতিবার মামলাটি রুজু করে আত্মহত্যা বলে। মামলায় আসামী করা হয় শুধু রনি হাসানকে। এই ঘটনায় হত্যার কথা স্বীকার করে রনি হাসান থানায় নিজে অস্ত্রসমর্পণ করেন।
এই বিষয়ে নিহতের বাবা বাদী হয়ে কামরাঙ্গীর চর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে।
এই বিষয়ে কামরাঙ্গীর চর থানার অফিসার ইনচাজ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জনান, অভিযোগের বৃত্তিতে আমরা একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অপরাধে একটি মামলা রুজু করি মামলা নং- ৩৪ ।
এই বিষয়ে আমরা প্রাথমিক পযায়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা কারী রনি হাসানকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাকে কোটে চালান করা হয়েছে। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।
এদিকে ময়না তদন্ত শেষে স্বর্নার লাশ তার বাবার বাড়ি লৌহজংয়ের বেজগায়ে বিকেল ৬ টায় নিয়ে আসা হলে স্বর্নার আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে উঠে।