নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতি এখনো পূর্ণ আস্থা রয়েছে বিএনপির : মির্জা ফখরুল
প্রকাশ : 2025-10-30 15:53:39১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ নিয়ে আপত্তি থাকলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতি এখনো পূর্ণ আস্থা রয়েছে বিএনপির।'
তিনি বলেছেন, 'জুলাই সনদ নিয়ে আপত্তি থাকলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো শঙ্কা নেই। বিএনপি বিশ্বাস করে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে কোন ধোঁয়াশা নেই।'
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত দুই দিনের (২৮ ও ২৯ অক্টোবর) স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। মঙ্গলবার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংষ্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শীর্ষক প্রস্তাবনা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদে সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে। এরূপ প্রস্তাবিত আদেশের একটি খসড়া সংযুক্তি-২ এবং সংযুক্তি-৩ এ সংযোজিত করা হয়েছে। বিএনপি মনে করে, সরকারের এমন আদেশ জারির এখতিয়ার নেই। যে কোনো আদেশ অবশ্যই রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে হতে হবে।'
তিনি বলেন, 'জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর যে কোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পরই কেবল আইনে পরিণত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনটা হলে তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি হবে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে সব বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে তার উল্লেখ না রেখে এবং দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আসেনি তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সব সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবনা ও সুপারিশগুলো একপাক্ষিকভাবে এবং জোরপূর্বক জাতির ওপর চাপানো হচ্ছে। যেসব দফায় সবাই সম্মত হয়েছিল, তার মধ্যে কিছু দফা অগোচরে পরিবর্তন করা হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে সুপারিশমালা দিয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ একপেশে ও জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ হয়েছে তা ছিলো অর্থহীন, প্রহসনমূলক ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'কথা ছিল আগামী নির্বাচিত জাতীয় সংসদ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে এবং তার আইনি ভিত্তি দেবে। অথচ সুপারিশমালায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পরিষদ নামে একটি টার্ম যোগ করা হয়েছে। এটা অনভিপ্রেত ও উদ্দেশ্যমূলক।'
মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, 'প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে সংস্কার শেষ করতে ব্যর্থ হলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, হাস্যকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ।'
তিনি বলেন, ‘এসব সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যে কোনও সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে।’
গণভোটের ব্যাপারে মির্জা ফখরুল জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে। তার আগে গণভোট অনুষ্ঠিত করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, সময়, অর্থ ও নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় এটি অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত।'
বিএনপি দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি, জাতীয় অর্থনীতি বিকাশসহ সকল বিষয়ে যুগান্তকারী সব সংস্কার ও উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা আন্তরিকভাবেই চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের অবস্থান গ্রহণ ও প্রকাশে আমরা দ্বায়বদ্ধ।'
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।