পঞ্চগড়ে পৌর সভার সাবেক মেয়র কোটিপতি জাকিয়া খাতুন লাপাত্তা
প্রকাশ : 2025-03-07 18:49:26১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

চাকরীর সুবাদে পঞ্চগড়ে এসে আওয়ামীলীগের সান্নিধ্য পেয়ে মেয়র বনে যান জাকিয়া খাতুন। তিনি প্রায় তিন দশক ধরে পঞ্চগড়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার কারণে পৌর এলাকার বাসিন্দা হয়ে ভোটার হন । তার আদিনিবাস দিনাজপুর।তার স্বামী আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে করনিকের চাকরী করেন। তার স্বামীর সাথে পঞ্চগড়ে বসবাস করেন।এবং ডক্টর আবেদা হাফিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা পদে চাকরী নেন। বিগত সময়গুলোতে তিনি শুধুমাত্র সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে পরিচিতি পান জাকিয়া খাতুন।
এরপর আওয়ামীলীগের টানা ১৫ বছর তিনি রাজনীতির অঙ্গনেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।বিএনপি সরকার গঠন করতে না পারায় তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।বিএনপি সরকারের সময় রাজনৈতিক মাঠে না থাকলে পরবর্তীতে তিনি মহিলা আওয়ামীলীগের বড় নেত্রী হয়ে ওঠেন। এরপর তার উত্থান ঘটে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। এরপর ২০২০ সালে নৌকার টিকিট পেয়ে বিনা ভোটের নির্বাচনে জাকিয়া খাতুন পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ভোট বিহীন ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চগড় পৌর নিবার্চনে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের দাপুটে নেত্রী মাহমুদা বেগম পূর্ন সহযোগীতা পেয়ে সে সময় নির্বাচনে ভোটের রানী হয়ে ওঠেন।
মহিলা নেত্রী মাহমুদা বেগমের পাশাপাশি আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সাথে এক নিবিড় সখ্যতা গড়ে ওঠে জাকিয়ার। তারই সুযোগে তিনি কাউকে সে ভাবে পাত্তা দিতেন না। এরপর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আরো ক্ষমতার দাপট দ্বিগুন হয়ে যায় তার। এরপর তিনি মাসে প্রায় পনের/ কুড়ি দিন ঢাকাতেই অবস্থান করতে থাকেন।ফলে পৌরবাসি নানা ভাবে হয়রানির শিকার হন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, পৌর সভার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অর্থ বরাদ্দের নামে তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করতেন। পৌরভাসীর অনেকেই জানান, জাকিয়া খাতুন নির্বাচনের আগে ভোটারদের নানা রকম প্রলোভন দিয়ে ভোট নেওয়ার অজুহাতে গ্রাম-মহল্লায় যান। এরপর নির্বাচনের কিছুদিন পর তিনি তার নিজের আখের গোছাতে থাকেন। তার এহেন কার্যকলাপে তার দলের লোকজন ওতাকে অপছন্দ করতে শুরু করেন এবং অনেকে তার সান্নিধ্য ছেড়ে দেন।পাপাপাশি জাকিয়া তার প্রভাবপতিপত্তির কারনে কলেজে না গিয়ে বেতন তুলে নেন জাকিয়া খাতুন।তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করার সুবাদে কোটিপতি হয়ে যান।অথচ তিনি স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে মাত্র ২২ হাজার টাকা বেতনের চাকরী করে এখন বাড়ি-গাড়ি করে ধন সম্পদের বিশাল মালিক বনে যায়।জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের সময় তিনি সেই আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে সক্রিয় অবস্থান নিয়ে ছিলেন তিনি।আন্দোলন ঠেকাতে নজিরবিহীন অপকর্মের পর তিনি এখন লাপাত্তা। কোথায় আছেন তিনি তা এখনো অধরা-অজানা। তবে নানা সূত্রে জানা যায়, তিনি এখন রাজধানী ঢাকাতে তার বিলাসবহুল বাড়িতে বিলাসী জীবন-যাপন করছেন।তবে জাকিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল সহ খরচরে নামে নানা খাতে অর্থ লুটপাট , মাষ্টারোল পদে কর্মচারী নিয়োগ, বরাদ্দ আনার নামে ঠিকাদারদের নিকট মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া পৌরসভায় কোটি কোটি টাকার কাজ নিজেই ঠিকাদারী করা, দোকানপাট বরাদ্দের নামে লাখ লাখ টাকা আতœসাত নানা রকমের তদবির বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সূত্র জানায়, তিনি গত বছর টেন্ডারের নামে ঠিকাদারদের কাজ ভাগবাটেয়ারা করে নগদ ৩০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন।পতিত আওয়ামী সরকারের পতনের পর জাকিয়া পঞ্চগড় ছেড়ে আতœগোপনে গা ঢাকা দেন। তার পঞ্চগড়ে গড়ে তোলা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ছেড়ে উধাও হয়ে যান। অভিযোগ মতে, জানা যায় তিনি পঞ্চগড় পৌরসভায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে পৌর ভবনের সামনে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সুপার মার্কেট নির্মাণ করেন। সে সময় পঞ্চগড়ের এক প্রভাবশালী ঠিকাদারকে ওই কাজটি দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।অথচ এ মার্কেটটি সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় গত তিন বছর ধরে এখন পরিত্যক্ত পড়ে আছে। জাকিয়া খাতুন শুধু ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য পৌরসভার টাকায় মূল গেটের সঙ্গে কয়েকটি দোকানঘরও নির্মাণ করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। একই সঙ্গে তার আমলে প্রতিটি অর্থবছরে পৌরসভার বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজের ঠিকাদারি নিতেন তিনি। আর কাজগুলো দেখভাল করতেন তার স্বামী ।নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জাকিয়া খাতুন এখন ঢাকায় তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। ঢাকায় গেলেই তিনি সেখানে অবস্থান করতেন। সেখানে তার রয়েছে একটি বিলাসবহুল গাড়িও।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহমুদা বেগম কৃকের খুঁটির জোরেই জাকিয়ার ভাগ্য খুলে যায়। তার আর্শিবাদে আয়-উন্নতিতে লাভবান হয়ে যান। এছাড়া আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ একাধিক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে সখ্যতা ছিল জাকিয়ার।ফলে তিনি এতোটাই বিলাসী আর আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে ওঠেন।এদিকে তিনি পৌর মেয়র থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই সঙ্গে পঞ্চগড় ড. আবেদা হাফিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক হিসাবে ও পৌরসভার মেয়র হিসাবে বেতন-ভাতাদি নিয়েছেন যা রাস্ট্রের নিয়মপরিপন্থি।
তবে ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জুলাই বিপ্লবের পর থেকেই শারীরিক অসুস্থতাজনিত ছুটিতে থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করেন। তবে ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি স্কুলে উপস্থিত হতেন না। তবে ক্ষমতার দাপটে একদিনে গিয়ে সব হাজিরায় স্বাক্ষর করতেন। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, জানা যায়, জেলায় তার কার্যক্রমে নানা রকম কানা ঘুষায় কদিন আগে ইস্তফা দেন।
নানা সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায় জাকিয়া খাতুন ২০২০ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ঢাকার বনশ্রীতে দুই কোটি টাকা দিয়ে অভিজাত ফ্লাট কিনেছেন। এছাড়া তার মেয়েকে বিপুল অর্থ ব্যয় করে ঢাকার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাচ্ছেন। একই সঙ্গে মেয়েকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন লেটেস্ট মডেলের প্রিমিও -এফ মডেলের গাড়ি ও। এছাড়া তার বাবার বাড়ি দিনাজপুর শহরেও গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি ও বিপুল সহায়-সম্পদ। তবে এবিষয়ে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ‘ তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, সাবেক মেয়র জাকিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ কয়েকটি অভিযোগে থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে।গত জুলাই বিপ্লবের পর থেকেই তিনি আতœগোপনে চলে যান। তবে আমরা তাকে গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।