স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনিয়মের চিত্র
প্রকাশ : 2025-05-05 15:29:20১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। সোমবার (৫ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। ৩২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের পাবলিক ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ হাজারের বেশি নিরীক্ষা আপত্তি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে অনেকগুলো ১৯৯৮-২০০৩ সালের প্রথম সেক্টর প্রোগ্রামের সময়কার। এই আপত্তিগুলোর আর্থিক মূল্য রাজস্ব বাজেটে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন বাজেটে ৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। এর প্রায় ৯৫ শতাংশ আপত্তি রাজস্ব বাজেট সম্পর্কিত, যার বেশিরভাগই স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন। এই পরিস্থিতি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহির ঘাটতির একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে বলে মনে করে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা থাকলেও বাস্তবে বহু অনিয়ম বিদ্যমান। সরকারি নিরীক্ষা ব্যবস্থা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নিরীক্ষা ইউনিট এবং ফিডিউশিয়ারি অ্যাকশন প্ল্যান থাকা সত্ত্বেও বহু নিরীক্ষা আপত্তি অমীমাংসিত থেকে গেছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অডিট ইউনিটের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেক্টরওয়াইড প্রোগ্রামের শুরু থেকেই অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অডিট ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীদের চাপের ফলে, ইউনিটটির কাঠামো আনুষ্ঠানিকভাবে গঠনের দিকে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং জনবলও বৃদ্ধি পেয়েছে। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রামের (২০২৪) শেষ নাগাদ, আগের যেসব অভ্যন্তরীণ অডিট আউটসোর্স করা হতো, সেগুলো এখন অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অডিট ইউনিট নিজেই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আর্থিক ও হিসাব সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অডিট আপত্তি রয়ে গেছে। বিভাগীয় সচিব, যিনি প্রধান হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনিই সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য চূড়ান্তভাবে দায়ী। কিন্তু অডিট আপত্তিগুলোর সুষ্ঠু নিষ্পত্তি না হওয়ায় এই দায়িত্ব আরও জটিল ও চাপপূর্ণ হয়ে উঠছে। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিতে এই ব্যর্থতা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও নির্দেশ করে। এটা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একটি বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিডিউশিয়ারি ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রামের (২০১৭-২০২৪) সময়ে ফিডিউশিয়ারি অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথভাবে নিয়মিত পর্যালোচনার মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। তবে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫৪৪টি অমীমাংসিত অডিট আপত্তি থেকে যায়, যার আর্থিক মূল্য ৩ লাখ ১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। এমনকি বিশ্বব্যাংক, আইডিএ, এডিবি, জাইকার মতো প্রধান উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন করা প্রকল্পগুলোতেও অডিট সম্মতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়নি। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, এফএপি কিছু প্রচেষ্টা করলেও আর্থিক জবাবদিহি ও অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি সংক্রান্ত মূল সমস্যাগুলো যথাযথভাবে সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়া, একটি ফলাফলভিত্তিক ও কার্যকর কৌশলগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক তদারকি ব্যবস্থা দুর্বলতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক তদারকি ব্যবস্থাগুলো বর্তমান আর্থিক অনিয়ম ও অডিট আপত্তিগুলো যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না। যদিও সরকারি অডিট এবং ফিডিউশিয়ারি অ্যাকশন প্ল্যানের মতো ব্যবস্থা চালু আছে, তবুও বহু সমস্যার অমীমাংসিত রয়ে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
কা/আ