আমি দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি ডাকের অপেক্ষাই করছিলাম: বুলবুল

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১১:০৬ | আপডেট : ১ জুন ২০২৫, ১৭:৪২

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পেয়েছে নতুন সভাপতি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পাঠানো একটি চিঠির পর বিসিবিতে আয়োজিত বোর্ড সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক অধিনায়ক ও অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে পরিচালক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর শূন্যপদের বিপরীতে তাকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে নাজমূল আবেদীন ফাহিম ও সহ-সভাপতির পদে ফাহিম সিনহাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে বিসিবি পরিচালক ও তখনকার সভাপতি ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করে এনএসসি।
শুক্রবার (৩০ মে) দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বক্তব্যে বুলবুল বলেন, 'দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছি। এবার প্রথমবারের মতো এমন একটি দায়িত্ব পেলাম। এপ্রিল মাসে ক্রীড়া উপদেষ্টার ফোন পেয়েছিলাম্ভসেটিই ছিল আমার জন্য মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মুহূর্ত।' তিনি আরও বলেছেন, 'অনেকে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন করেছেন, আমি কেন বাংলাদেশে এসে ক্রিকেটের দায়িত্ব নেই না, সেই প্রশ্নের অবসান ঘটেছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি ডাকের অপেক্ষাই করছিলাম, যেটি ক্রীড়া উপদেষ্টার থেকে পেয়েছি এবং সঙ্গে সঙ্গে রাজিও হয়ে গেছি।' এই বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেছেন, 'ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে সিইও কিংবা সভাপতি এমন কোনো পদের জন্য প্রস্তাব দেননি। তিনি শুধু বলেছেন, আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করব কিনা, আমি তার প্রস্তাবে হ্যাঁ বলেছি।'
বিসিবির সভাপতি হওয়ার পরে বুলবুল বলেন, 'বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সামনের সারি থেকে এগিয়ে নিতে চাই। শুধু ১১ জন ক্রিকেটার নয়, পুরো দল হিসেবে আমরাও কাজ করব। আমি সবসময় বিশ্বাস করিকথার চেয়ে কাজ গুরুত্বপূর্ণ। একজন বোলার যেমন একা খেলতে পারেন না, সেজন্য তার ফিল্ডিং দরকার, আনুষঙ্গিক আরও কিছু বিষয় দরকার, তেমনি নেতৃত্বেও সহযোগিতা দরকার।' নতুন ভূমিকায় বুলবুল তার সীমিত অভিজ্ঞতার কথা স্বীকার করে নিলেও আশাবাদী, 'আমি সংগঠক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করলেও বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নতুন। সবার অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করব। একজন উপজেলার ছেলে কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে আসে, সে কাঠামো গড়াই হবে আমার অগ্রাধিকার।'
ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল নিয়ে তিনি সরাসরি কিছু না বললেও বলেন, 'সময়ের সঙ্গে সবকিছু স্পষ্ট হবে।' বোর্ডে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বুলবুল বলেন, 'মার্কেটিং বিভাগকে আরও প্রসারিত করছি। ব্যাংক ট্রান্সফারসহ আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করব। কিছু বিষয় নতুন করে রিভিউ করব।' তিন মাসের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার গুঞ্জন নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি তিন মাসের জন্য আসিনি। আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ দায়িত্বে সময়সীমার কোনো বিষয় নেই।' তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, যতটুকু সময় পান, এই সময়ে তিনি টি-টোয়েন্টি স্বভাবে এগিয়ে যেতে চান। আগামী অক্টোবর মাসের আগে বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরিষ্কার না করলেও সে পর্যন্তই সভাপতি হিসেবে থাকবেন তিনি। তবে নির্বাচনে আবারও বুলবুলের সভাপতি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সিইও নিয়োগ নিয়ে বুলবুল বলেন, 'এখন সবকিছু রিভিউ করে সামনের দিকে এগোতে চাই।' সবশেষে তিনি বলেন, 'আমি কোনো বেতনভুক্ত সভাপতি নই। আইসিসিতে ১০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আমার পেছনে আছে। আমি এখানে এসেছি চ্যালেঞ্জ নিতে, প্রমাণ দিতে।' কথা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে নিয়েও। সাবেক এই অলরাউন্ডার ফিট থাকলে এবং খেলায় থাকলে জাতীয় দলের জার্সি দেখা অসম্ভব কিছু না, এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।'
এ দিকে বুলবুলের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিসিবির অন্যান্য পরিচালকরাও। তাদের মধ্যে মাহবুবুল আনামের কাছে জানতে চাওয়া হয় জাতীয় দলের সাবেক প্রধান কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বহিষ্কার নিয়ে। ফারুক আহমেদ শ্রীলঙ্কান এই কোচকে বহিষ্কার করেছেন বিশ্বকাপের ময়দানে এক ক্রিকেটারকে হেনস্তা করার অভিযোগে। যে অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন মাহবুবুল আনামসহ তিনজন। সে সময়ে তারা কোনো প্রমাণ পেয়েছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নে এই পরিচালক বলেছেন, 'যথাযথ তথ্য পেলে তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হতো।' অর্থাৎ তার কথার সূত্র ধরে বলা যায়, ফারুক আহমেদ প্রমাণ না পেয়েও হাথুরুকে শাস্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু বোর্ড সভাপতি থাকাকালীনই ফারুক বলেছিলেন, হাথুরুর বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে। এই বিষয়সহ আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনে আট পরিচালক অনাস্থাপত্র দিয়েছিলেন। তারপরেই এনএসসি ফারুককে সরিয়ে দেয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত