বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের যে ব্যাখ্যা দিলেন নির্বাচকরা
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১৪:০৮ | আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:৫৬
জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। নাজমুল হোসেন শান্তকে অধিনায়ক ও তাসকিন আহমেদকে সহঅধিনায়ক করে চারজন পেস বোলার ও তিনজন স্পেশালিস্ট স্পিনারকে দলে রেখে ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
পনের সদস্যের দলের সাথে ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে থাকবেন একজন পেসার ও একজন ব্যাটসম্যান।
দলে নাজমুল হোসেন শান্তসহ ব্যাটার হিসেবে থাকছেন লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, তাওহিদ হৃদয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলি অনিক।
পেস বোলিংয়ে থাকছেন তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব।
স্পিন অ্যাটাকে রয়েছেন ডানহাতি লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন, ডানহাতি অফস্পিনার শেখ মাহেদি ও বাঁহাতি অর্থডক্স তানভির ইসলাম। অলরাউন্ডার হিসেবে থাকছেন বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও অর্থডক্স স্পিনার সাকিব আল হাসান। এই পনেরজনের বাইরে ব্যাটার আফিফ হোসেন ও বোলার হাসান মাহমুদ থাকবেন ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে।
প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু দল ঘোষণার সময় জানিয়েছেন যে তারা অন্তত তিনজন ওপেনিং ও পাঁচজন মিডল অর্ডার ব্যাটারের সাথে চারজন পেসার ও চারজন স্পিনার নিয়ে দল গঠন করতে চেয়েছেন।
তবে বিশ্বকাপে দল নিয়ে সমর্থকদের ‘অতিরিক্ত প্রত্যাশা’ যেন না থাকে সে বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনি বলেন, “টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমরা সেই পর্যায়ে চলে যাইনি যে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ যাবে, এমনটা ধরে নেয়া যায়। তবে আমরা প্রত্যাশা করবো প্রথম রাউন্ড পার করে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেন খেলতে পারি।”
দল ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ওঠে ইনজুরিতে থাকা তাসকিনকে দলে রাখা নিয়ে।
সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পান পেসার তাসকিন আহমেদ। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে ইনজুরি থেকে তিনি ফিরতে পারবেন কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
এরকম পরিস্থিতিতে তাসকিন আহমেদকে কেন স্কোয়াডে রাখা হয়েছে সেই ব্যাখ্যা দেন প্রধান নির্বাচক। “আমরা আশা রাখছি যে বিশ্বকাপ চলার একটি পর্যায়ে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। সেই আলোকেই তাকে দলে রাখা হয়েছে।” এছাড়া আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী একজন ইনজুরড খেলোয়াড়কে দলে রাখার সুযোগ আছে বলেও জানান প্রধান নির্বাচক। “আইসিসির নতুন নীতি অনুযায়ী একজন ইনজুরড খেলোয়াড়কে দলে নেয়া যাবে। পরে প্রয়োজনে যে কোনো সময়ে তার বদলে অন্য কাউকে দলে নেয়া সম্ভব।”
সবশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে চার ম্যাচে ৪.৫৬ ইকোনমি রেটে আট উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হয়েছেন তাসকিন। তাই ফর্মে থাকা এই পেসার ইনজুরিতে থাকলেও তাকে দলে রাখা হয়েছে।
অফ ফর্ম লিটনকে রাখা হয়েছে যে বিবেচনায়
সবশেষ সিরিজে রান না পাওয়া এবং গত কিছুদিন ধরে অফ ফর্মে থাকা ডানহাতি ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাসকে দলে রাখার পেছনে নির্বাচকদের যুক্তি কী ছিল, এমন প্রশ্ন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। লিটনকে শুধু ওপেনিং ব্যাটার নয়, উইকেটকিপার হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচক। “ফর্মের ঘাটতির পরও লিটনের ওপর আমরা আস্থা রেখেছি। আর তাকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তার আস্থার জায়গাটা কীভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, সেই কাজটা টিমের কোচিং স্টাফরা করে যাচ্ছে,” বলেন মি. লিপু। লিটনের ‘বল সিলেকশন ও শটপ সিলেকশনের ক্ষেত্রে’ যে ঘাটতি আছে তা দলের কোচি স্টাফ পূরণ করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাইফুদ্দিন যে কারণে দলে নেই
সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে সিরিজের চার ম্যাচে আট উইকেট পাওয়া মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে বিশ্বকাপের দলে রাখা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয় যে সবশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এবং জিম্বাবুয়ে সিরিজে পেসার তানজিম সাকিবের চেয়ে বেশি উইকেট পেলেও কেন সাইফুদ্দিনকে না নিয়ে তানজিম সাকিবকে দলে রাখা হলো। এই প্রশ্নের জবাবে মি. লিপু বলেন, “টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে শুধু উইকেটের সংখ্যা দিয়ে পারফর্মেন্স বিবেচনা করা যায় না।” তিনি জানান, সাইফুদ্দিনের যেই জায়গায় যে ধরনের পারফর্ম করার প্রয়োজন ছিল, সেই পারফরমেন্স সাইফুদ্দিন দেখাতে পারেননি বলে নির্বাচকরা মনে করেন। পেসার তানজিম সাকিব আর সাইফুদ্দিনের মধ্যে কাকে দলে রাখা হবে, তা নিয়ে নির্বাচকদের মধ্যে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছিল বলে জানান প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
শেষ পর্যন্ত ‘আস্থার জায়গায়’ সাইফুদ্দিনের চেয়ে তানজিম সাকিবকেই এগিয়ে রেখেছেন নির্বাচকরা।
যে কারণে দলে চার স্পিনার যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এবারের বিশ্বকাপেরসহ আয়োজক হিসেবে থাকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্পিনাররা তুলনামূলক বেশি সুবিধা পাবে বলে স্কোয়াডে চারজন স্পিনার রাখা হয়েছে বলে জানান নির্বাচকরা।
বাংলাদেশের সাবেক স্পিনার ও নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক বলেন, “উপ-মহাদেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজেই স্পিনাররা কিছুটা বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আইসিসির ইভেন্ট, তাই তাদের নজরদারি থাকবে। খুব বেশি সুবিধা না পেলেও আবহাওয়ার জন্য যতটা সুবিধা পাওয়া যায়, সেটি আমাদের সুবিধা দেবে।”
এছাড়া গ্রুপ পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস ও নেপালে ডান হাতি ব্যাটসম্যান বেশি হওয়ার কারণে সাকিব বাদেও একজন বাঁহাতি স্পিনার রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচক।
দলে অভিজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ও নাসুম আহমেদকে না রেখে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ তানভির ইসলামকে রাখার পেছনে যুক্তি দেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
“আলোচনা প্রসঙ্গে তাইজুল আর নাসুমের নাম এসেছে। তাইজুলের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পারফরমেন্সের বিচারে আমাদের মনে হয়েছে তানভির ইসলাম সবচেয়ে ভালো অপশন।”
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হবে ৮ই জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর ১০ই জুন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩ই জুন আর ১৭ই জুন প্রথম রাউন্ডের শেষ দুই ম্যাচে বাংলাদেশ খেলবে নেদারল্যান্ডস আর নেপালের বিপক্ষে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত