স্মৃতিতে শফি বিক্রমপুরী

  মো.জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৪৬ |  আপডেট  : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:০০

জিয়াউর রহমানের আমলে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে শ্রীনগর- লৌহজং আসনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে বদনা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন শফি বিক্রমপুরী। সেবারই আমি তাঁর নাম জানি। বাড়ি শ্যামসিদ্ধির  সেলামতী গ্রামে।

যদিও বাল্যকাল থেকেই তারা ঢাকায়  থাকেন, তাঁর লেখাপড়া বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তাঁর সাথে কবে কোথায় আমার পরিচয় হয় তা মনে নেই। তবে ১৯৮০ সালে বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালে তাঁর সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সভায় তিনি নিয়মিত আসতেন। প্রথম ৩/৪ জন জীবন সদস্যদের মধ্যে তিনি একজন।

আমাকে তিনি কেন যেন ভাল জানতেন। বেগম জিয়ার শেষ আমলে যখন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের চাকুরী যায় যায় অবস্থা- তখন তিনি আমার জন্য হারিস চৌধুরীকে ধরেন যাতে বাধ্যতামূলক অবসরের তালিকায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত না হয়। কৃষিব্যাংকের একটি গ্রুপ আওয়ামী পন্থীদের তালিকা করে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের হাতে দিয়ে আসতেন। ফরিদ, আজিজ আরশাদ, নূরুল ইসলাম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়ার  পেছনে কৃষিব্যাংকের জিয়া পরিষদের গ্রুপটি ইন্ধন রয়েছে। আমি মরহুম শামসুল ইসলাম( মন্ত্রী)ও শফি বিক্রমপুরীর  আন্তরিক চেস্টায় রক্ষা পাই।

“আমার দেখা ঢাকা'র ’৭৫ বছর”  বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

শফী বিক্রমপুরীর সাথে সর্বশেষ দেখা হয় গত ১৫ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁর লেখা “আমার দেখা ঢাকা'র ’৭৫ বছর” বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ।আমাকে তাঁর বই সম্পর্কে মহিউদ্দীন খান মোহনের অনুরোধে কিছু বলতে হয় সে আয়োজনে। লেখক হিসেবে তিনি বসে কিছু কথা বলেন। শরীর খুবই দুর্বল ছিল বিদায়কালে তিনি বলেন " ভাই আমার জন্য দোয়া করিও।" সেটাই শেষ দেখা-শেষ কথা।
তিনি বিএনপি করলেও দলকানা ছিলেন না। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতেন। আমি আওয়ামীপন্থী জেনেও আমাকে ভাল জানতেন এ কারণেই।

তিনি চলচ্চিত্রের পরিচালক-প্রযোজক ছিলেন। চলচ্চিত্র অঙ্গনে একাধিক শফী নামের ব্যক্তিত্ব থাকার কারনে এক সুহৃদের প্রস্তাবে তিনি মূল নামের সাথে বিক্রমপুরী সংযোজন করে শফী বিক্রমপুরী নাম ধারণ করেন। এতে আসল নাম শফীউর রহমান  নামে তাঁকে অনেকে চিনতেন না। 

শফি বিক্রমপুরী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতির সভাপতি ছিলেন। পারিবারিক  অন্যান্য  ব্যবসাও করতেন।কূলিয়ার চরে বরফকল ও মাছ সংরক্ষণ হিমাগার ছিল ঢাকা সহ বিক্রমপুরে স্থাবর বহু সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরেও তাঁর মধ্যে কখনও অহংকার দেখিনি। বাবা-মা'র নামে নিজ গ্রামে উচ্চ বিদ্যালয়, আরধীপাড়ায় স্ত্রীর নামে প্রাথমিক বিদ্যালয় করেছেন।শ্রীনগর হরপাড়া- ছনবাড়ী সংলগ্ন  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহা সড়ক সংলগ্ন খুবই মানসম্মত দৃস্টি নন্দন মসজিদ ও মাদ্রাসা করেছেন। 

তাঁর স্ত্রী একজন মননশীল মহিলা। ছোট গল্প লিখেছেন অনেক। এক পুত্র এক কন্যার জনক শফী বিক্রমপুরী অগনিত আত্বীয় স্বজন ছাড়াও শত শত গুনগ্রাহী সুহৃদ রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘ সময় ঢাকাস্থ বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি প্রচার বিমুখ ছিলেন। নীরবে অনেক দান করতেন।

প্রকৃত ভদ্র ও নিরীহ মানুষ ছিলেন শফী বিক্রমপুরী। তাঁর মৃত্যুতে আমি আপনজন হারাবার শোক অনুভব করেছি।তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।

 

কা/আ

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত