পুরো জেলা জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক!
বরগুনায় মহামারীতে রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, ৬ জনের মৃত্যু

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১৮:২৪ | আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, ০০:২৯

বরগুনায় মহামারীতে রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬ জন। প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে ৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৭২ জন। জেলা জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। ভয়ংকর এই পরিস্থিতে ২৫০ বেডের হাসপাতালেও সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অসংখ্য রোগীর। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বরগুনার হাসপাতালে এমন চিত্র আর কখনো দেখা যায়নি। আগে ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেলেও এবার সকল কিছুকে ছাপিয়ে হাসপাতালের কড়িডোর এমনকি সিঁড়ির কাছে শুয়েও চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য রোগীকে। অজানা আশঙ্কায় সময় কাটছে স্বজনদের। প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
চিকিৎসক সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা বরগুনার ২৫০ বেডের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর রয়েছে রোগীদের নানা অভিযোগ। রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করছেন, একমাত্র প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো ঔষধ তারা পাচ্ছেন না হাসপাতাল থেকে। রোগীর স্বজন বরগুনা পৌরসভার আমতলা রোডের স্বপন শরীফ বলেন, আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। তবে এখানে এসে যে চিত্র দেখতে পেলাম তাতে মনে হচ্ছে, বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারী রূপ নিয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংকটের কারণে রোগীদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা জরুরী ভিত্তিতে বাড়াতে হবে। বরগুনা সদর উপজেলার ২ নং গৌরীচন্না ইউনিয়নের সোনার বাংলা এলাকার ডেঙ্গু রোগী আমিনুর বলেন, হাসপাতাল থেকে কয়েকটা প্যারাসিটামল দিয়েছে। দুটো স্যালাই ও ইনজেকশন আমরা বাহির থেকে কিনে এনেছি।
শুধু হাসপাতালেই নয়, জেলার অধিকাংশ বাড়িতে আছে ডেঙ্গু রোগী। তাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পুরো জেলাবাসী। এডিস মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে ২৪ ঘণ্টাই কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে বাসা-বাড়িতে।
সারা দেশের সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে শুধু বরগুনাতেই রয়েছে ২ হাজারের অধিক। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংকটের কারণে ক্ষুব্ধ বরগুনাবাসী। পর্যাপ্ত চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতির দাবিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে বরগুনার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কর্তৃক দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা দেবেন বলে তারা জানান।
এপ্রিল মাস থেকেই বরগুনায় বাড়তে থাকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। মে মাসে এসে তা মারাত্মক আকার ধারণ করলেও বর্তমানে তা মহামারীতে রূপ নিয়েছে। শুধু হাসপাতাল নয় জেলার অধিকাংশ বাড়িতে আছে ডেঙ্গু রোগী। অনেককে রেফার করা হয়েছে বরিশাল শেবাচিমে। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক রোগী রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংকটের কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারী রূপ ধারণ করায় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ আতঙ্কিত বরগুনার সাধারণ নাগরিক। সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা না করলে সামনে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী দেবে বলে ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা।
বরগুনা ২৫০ বেডের হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মো: রেজওয়ানুর আলম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে আমারা মহামারীই বলতে পারি। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে ১০ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স পদায়ন করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ কাজে যোগদান করেছেন বাকীরা দুএক দিনের মধ্যে যোগদান করবেন। এছাড়া স্যালাইনসহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রি পর্যাপ্ত আছে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও পৌর প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জেলাবাসীকে সচেতন করতে কাজ করছে পৌর প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন। মশা নিধনের ঔষধ ছিটানো, মাইকিং ও বিভিন্ন ডোবা ও নালা পরিষ্কাররের কাজ করছেন তারা। এডিস মশার লার্ভা নিধনে আগামী তিন দিনের মধ্যে বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানি অপসারণ ও ময়লা পরিষ্কার না করা হলে দোষীদের শাস্তি প্রদান করবে মোবাইল কোর্ট।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত