মুরাদনগরের ঘটনায় ফুঁসছে শোবিজ

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১৪:৫৯ | আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, ১৮:৪২

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ঘরে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমন একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সোচ্চার সাধারণ মানুষ। সবাই প্রতিবাদ জানাচ্ছে ঘটনাটির। শোবিজ তারকারাও পিছিয়ে নেই। এমন বীভৎস একটা ঘটনার প্রতিবাদে তারাও সরব। বলা যায়, রীতিমত ফুঁসছে শোবিজ অঙ্গন।
আজমেরী হক বাঁধন প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘ধর্ষণ একটি ভয়াবহ অপরাধ। কিন্তু এই দেশে, এটি দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। মানুষ কেবল তখনই এটি নিয়ে কথা বলে, যখন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ভাইরাল হয়, একটি ভিডিও ক্লিপ, একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। তারপর হঠাৎ করেই সবাই ক্ষেপে যায়। কিন্তু অল্প সময়ের জন্য। শীঘ্রই, মানুষ এগিয়ে যায়, ভুলে যায় সব। কারণ প্রতিদিন একটি নতুন নাটক, নতুন কেলেঙ্কারি। একজন মহিলার যন্ত্রণা তার আরেকটি অংশ হয়ে ওঠে। এটা কেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে? আমরা ধর্ষণকে সংবাদের মতো বিবেচনা করি, এটিকে গুরুতর সংকটের মতো নয়? আরও খারাপ কথা, কিছু লোক এই অপরাধগুলি রেকর্ড করে, শেয়ার করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনোদনের মতো ছড়িয়ে দেয়। তারা নির্দোষ নয়। তারা অপরাধের অংশ। এবং তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে, প্রচন্ড রেগে আছি আমি এবং হ্যাঁ, আমি ভীত। কারণ আমি একজন মহিলা এবং আমি নিরাপদ বোধ করি না। বাস্তবে তো অবশ্যই, এমনকি অনলাইনেও না। ধর্ষণ তৃপ্তিদায়ক কোনও বিষয় নয়। ট্রমা নাটক নয়। আর এসবএটা চলতে পারে না।’
তমা মির্জা লিখেছেন, ‘মুরাদনগর, কুমিল্লা! বিভৎসতা! লজ্জা…!’
মিশা সওদাগর অপরাধীর ফাঁসির দাবী জানিয়ে লিখেছেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে থাকুক। প্রতিটি নারী নিরাপদে থাকুক। প্রতিটি অন্যায়ের ন্যায় বিচার হোক। প্রতিটি ধর্ষকের ফাঁসি হোক। মুরাদনগরে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের তীব্র ঘৃণা এবং নিন্দা জানাচ্ছি। ধর্ষকের ফাঁসির দাবি করছি।’
নুসরাত ফারিয়া লিখেছেন, ‘স্টপ রেপ।’
প্রার্থনা ফারদিন দীঘি লিখেছেন, ‘ধর্ষণকে না বলুন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নীরবতাই সমর্থন। ধর্ষণ বন্ধ করুন।’
আরশ খান লিখেছেন, ‘কাপুরুষত্ব যখন চরম পর্যায়ে পৌছায় তখন তা কুপুরুষত্বে রুপ নেয়। জন্ম পরিচয়হীন না হলে একজন নারীর সাথে এমন করা সম্ভব না। একবার জারজ সবসময় জারজই থাকে।’
মৌসুমী হামিদ প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘মানুষ আর মানুষ নেই। পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ আর কোনও মানুষ থাকবে না। খুব শীঘ্রই।’
জিয়াউল রোশান লিখেছেন, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ধর্ষকদের একটাই শাস্তি চাই। জনসম্মুখে ফাঁসি। তারা কোন দল করে, কোন ধর্মের সেটা জানা দরকার নাই, জানতেও চাই না। জাস্ট জনসম্মুখে ফাঁসি চাই। আর আপনারা যারা সমবেদনা জানিয়ে সেই ভিডিওটি শেয়ার করছেন, আবার কেউ কেউ ভিউ পাবার লোভে সেই ভিডিওটা আপলোড করছেন, আপনারাও সে ধর্ষণকারীর মতোই অপরাধী। আপনারা ভিউখোর রাক্ষস। ফাজলামি ছেড়ে দেন আর অতি সত্তর এইসব ডিলেট করেন।’
কণ্ঠশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ।’
কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহা লিখেছেন, ‘কোন দেশে আছি? এ কি দেখলাম? ঘেন্না ঘেন্না ঘেন্না, থু থু থু!’
জয় চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো তাই তোমায় ভালোবাসি। আমার প্রাণের বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি! কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর সাথে যা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। যিনি ধর্ষণ করেছেন এবং যিনি পরবর্তীতে ভিডিও করে পাবলিশ করেছেন উভয়ের বিচার চাই।’
নির্মাতা নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটা যেন একটা কৌতুক, আবার কষ্টের ট্র্যাজেডি। মনে হয়, পুরো দেশটা যেন এক বিশাল পরীক্ষাগার, আর সেই পরীক্ষার দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে এমন কারও হাতে, যার জ্ঞান নেই, দায়িত্ববোধ নেই। ঠিক যেন বান্দরের হাতে লাঠি। যার হাতে দেশের হাল, সে বুঝেই না, সে কী করছে। শক্তি আছে, ক্ষমতা আছে, কিন্তু বিচক্ষণতা নেই, দেশপ্রেম নেই। যে লাঠি দিয়ে দেশকে সামলানোর কথা, সেই লাঠি দিয়েই গুঁতো দিচ্ছে দেশের স্বপ্ন, সম্ভাবনা আর শান্তি। মানুষের ব্যথা-কষ্টের খবর কেউ রাখে না। নীতির জায়গায় এখন নীতিহীনতা, দেশের অবস্থা এমন এক নাটকের দৃশ্য, যেখানে দর্শক কাঁদছে-কিন্তু মঞ্চে যারা নাচছে, তারা বুঝতেই পারছে না, মানুষ হাসছে না, কাঁদছে। বাংলাদেশ এখন ঠিক সেই অবস্থায়, যেখানে বান্দরের হাতে লাঠি, আর দেশটা কেবল সহ্য করে যাচ্ছে।’
সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান লিখেছেন, ‘কোনও অপরাধী গ্রেফতার হলেই আমরা খুশি হই। আমরা থেমে যাই। আমাদের থেমে যাওয়ার পরই শুরু হয় আসল প্রক্রিয়া। আলগোছে অপরাধী মুক্ত হয়। বিদেশে পালিয়ে যায়। দেশে জায়গা বদল করে। যেকোনো এক উপায়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আমাদের সাথে মিশে যায়। ইতিহাস থেকে উঠে যায় অপরাধীর শাস্তি কার্যকরের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।’
নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘পুলিশ এখনও (সুদিনের অপেক্ষায়) নিরাসক্ত, দায়সারা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেই আগের মতোই নেতা-নেত্রী তোষণ করে উন্নতির উপায় খুঁজছে। পথেঘাটে চলতে ফিরতে গেলে এমনই বোধ হয়। বাংলাদেশে কিছুই বদলায় না। পুলিশও বদলাবে না।’
বলা দরকার, কুমিল্লার মুরাদনগরে আলোচিত ধর্ষণ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন- মুরাদনগর উপজেলার পাঁচকিত্তা বাহেরচর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে মো. আরিফ ও মো. তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত