ইরানে মার্কিন হামলা: তেহরানের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় বিশ্ব

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:৪২ | আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১৮:২১

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এর এক দিন পর ইরানও আত্মরক্ষার অঙ্গীকার করে। এরপর থেকেই বিশ্ব ইরানের জবাবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এরই মধ্যে মার্কিন নেতারা তেহরানকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে। রবিবার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটনসহ বেশ কয়েকটি শহরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়। তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘ইরানকে ছেড়ে দাও।’
এদিকে ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান পশ্চিম ইরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এর আগে ইরান তেল আবিবে এমন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যা বহু মানুষকে আহত এবং ভবন ধ্বংস করে।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘বাড়তি হুমকির পরিবেশ’ তৈরি হয়েছে। সেখানে সাইবার হামলা বা নির্দিষ্ট সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। বড় শহরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কূটনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে।
তেহরান এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিশোধ— যেমন: মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা কিংবা বিশ্ব তেল সরবরাহ বন্ধের হুমকি— বাস্তবায়ন করেনি, তবে তা দীর্ঘদিন ধরে রাখা নাও যেতে পারে।
ইস্তানবুলে এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, তারা সব ধরনের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করছে এবং প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত কূটনৈতিক আলোচনায় ফেরার প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে তারা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে না। তারা শুধু হুমকি ও শক্তির ভাষা বোঝে।’
টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে ট্রাম্প এই হামলাকে ‘বিস্ময়কর সামরিক সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং দাবি করেন, ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সুবিধাগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে থাকা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ সেন্ট্রিফিউজগুলো ধ্বংস হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা এখনও নিশ্চিত নয়।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, হামলার পর কোনও অতিরিক্ত বিকিরণ ধরা পড়েনি। সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি সিএনএনকে বলেন, ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের জন্য সময় লাগবে।
একজন শীর্ষ ইরানি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ফোর্দোতে থাকা উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগ হামলার আগেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এই দাবি নিশ্চিত করতে পারেনি।
যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান শেষ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় পররাষ্ট্রনীতির জুয়া খেলেন ট্রাম্প। তিনি এখন ইরানকে প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তাদের এখন শান্তি আনতে হবে নইলে ভবিষ্যতের হামলা আরও বড় এবং সহজ হবে।’
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তারা যদি ঝামেলা না করে, তাহলে ইরানের বিরুদ্ধে আর কোনও সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা নেই।’
রবিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলা নিয়ে আলোচনা করে। রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে একটি তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করে।
এদিকে ইরানের বহু নাগরিক আরও বড় সংঘাতের আশঙ্কায় আতঙ্কিত। প্রায় এক কোটি জনসংখ্যার তেহরান অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে মানুষ গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে যাচ্ছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
ইরানও ইসরায়েলের দিকে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর ফলে গত ৯ দিনে অন্তত ২৪ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত