ইসরায়েলের গোপন নথির ‘অমূল্য ভাণ্ডার’ খুব শীঘ্রই ফাঁস করা হবে: ইরান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৯ জুন ২০২৫, ১২:৩১ |  আপডেট  : ৯ জুন ২০২৫, ১৫:২৬

ইরানের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী এসমাইল খাতিব জানান, খুব শীঘ্রই ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে তেল আবিবের সম্পর্ক এবং এর প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা সংক্রান্ত গোপন নথিপত্র প্রকাশ করা হবে।

গতকাল রোববার দেশটির একটি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাতিব এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তেহরানের হাতে আসা এই নথিপত্র একটি 'অমূল্য সম্পদ', যা দেশের আক্রমণাত্মক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। তবে তিনি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রমাণ দেননি।

মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হলেও ইসরায়েল কখনোই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। দেশটির সরকার এখনো ইরানের হাতে নথি ফাঁসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে গাজা যুদ্ধ চলাকালে তেহরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এই গোপন নথিপত্র গত বছর ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে সাইবার হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

গোয়েন্দামন্ত্রী এসমাইল খাতিব বলেন, 'এই অমূল্য নথিপত্র হস্তান্তর একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া ছিল এবং এতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই, নথিপত্র পরিবহনের পদ্ধতি গোপনই থাকবে, তবে এগুলো খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে।'গোয়েন্দামন্ত্রী খাতিব নথিপত্রের পরিমাণ ব্যাখ্যা করে বলেন, 'হাজার হাজার নথিপত্র বলা হলেও তা কম বলা হবে।'

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ এই নথিপত্র নিরাপদভাবে দেশে আনার প্রয়োজনীয়তা এবং নিরাপত্তার কারণে কিছুসময় গণমাধ্যম নীরবতা বজায় রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব নথিপত্র বর্তমানে 'নিরাপদ স্থানে' রাখা হয়েছে।

পারমাণবিক সক্ষমতা ও আলোচনা

এই সাম্প্রতিক ঘটনা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বহু বছর ধরে চলা গোপন অভিযানের একটি অংশ।তেহরান অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করে, ইরান আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে, যারা ইসরায়েলের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাবে ইরান সীমিত হামলা চালালে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আঘাতের ঘটনা ঘটে। তবে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সতর্ক করে জানিয়েছে, তেহরানের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষাপটে যেন তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়েছে—এরপর থেকেই দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ বেড়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বোর্ড অব গভর্নরস চলতি সপ্তাহে ইরানকে তিরস্কার করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে চায় না এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান পরোক্ষ আলোচনায় একটি প্রধান বাধা হচ্ছে তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি। এই আলোচনার একাধিক দফা ইতালি ও ওমানে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিরসনে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো।

বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিত্যাগের প্রস্তাব 'আমাদের স্বার্থের শতভাগ বিরুদ্ধে'।

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, 'আমেরিকার উদ্ধত ও অহংকারী নেতারা বারবার দাবি করছে, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থাকা উচিত নয়। কিন্তু তোমরা কে এটি নির্ধারণ করার? তিনি চলমান আলোচনার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।

এদিকে, রোববার ইরানের সংসদের স্পিকার জানান, পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো বিষয় নেই বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোতে জানানো হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত