যে কোন সময় বড় রেল দূর্ঘটনার আশংকা

আদমদীঘির নশরতপুর রেল স্টেশনের উপর কুরবানীর পশুর হাট

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১৯:০৫ |  আপডেট  : ১৯ মে ২০২৫, ২১:৫৩

প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর রেল স্টেশনের উপর কোরবানির গরুর হাট বসানো হচ্ছে। যে কোন সময় বড় রেল দূর্ঘটনায় শত শত প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট সেকসনের নশরতপুর রেল স্টেশন। এই সেকশনে ৮ জোড়া অর্থাৎ ১৬টি যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ১০টি আন্তঃনগর খুবই দ্রæতগামী এবং ৬টি মেইল ও লোকাল ট্রেন। ঢাকা হতে লালমনিরহাট গামী লালমনি এক্সপ্রেস, ঢাকা হতে রংপুর গামী রংপুর এক্সপ্রেস, সান্তাহার থেকে বোনারপাড়া রংপুর হয়ে দিনাজপুর গামী দোলনচাপা এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে লালমনিরহাট হয়ে বুড়িমারী গামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস, সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট গামী করতোয়া এক্সপ্রেস। এই ৮টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট গামী পদ্মরাগ এক্সপ্রেস মেইল, সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট গামী উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস মেইল এবং সান্তাহার থেকে বোনারপাড়া গামী লোকাল ট্রেন এই ৬টি মেইল-লোকাল ট্রেন এই সেকশনে এই স্টেশনের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিরতিহীন ভাবে তেলের ট্র্যাঙ্কলড়ি ও যাতায়াত করে।

জানা যায়, নশরতপুর রেল স্টেশনে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার লম্বা এলাকা জুড়ে প্রতি বছর আদমদীঘি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোরবানি ঈদের আগে শুক্র ও সোমবার পশুর সরকারি ইজারার মাধ্যমে হাট বসায়। মজার ব্যাপার হলো নশরতপুর পশুর হাটের কোন জায়গা ও অনুমোদন নাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতারা গত ১৫ বছর জবরদস্তি করে অবৈধ ভাবে অতি ঝুঁকিপূর্ণ রেল লাইন ও রেল স্টেশনের উপর এ হাট বসায় এবং মন্ত্রণালয়ের সরকারি টোলের চেয়ে পশু প্রতি (গরু ছাগল) অতিরিক্ত আদায় করে। ট্রেন আসার সময় মাইকে ডেকে বলা হয় ট্রেন আসছে সাবধান! রেল লাইন থেকে গরু সরাও। ট্রেন দুই কিলোমিটার দুর থেকে হুইসেল বাজিয়ে গতি কমিয়ে আসতে হয়। কয়েক বার ট্রেন ব্রেক কষে থামানোর আগেই ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে একজন করে হাটুরে ও গরু মারা যায়। এরপরও আইন অমান্য করে ১৫ বছর ধরে দেশের সবচে ঝুঁকিপূর্ণ নশরতপুর রেল স্টেশনের উপর গরুর হাট চলছেই। এ বছরও আদমদীঘির উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক এই হাট ইজারা দেয়া হয়েছে বরে জানা গেছে। 

বগুড়া সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী (পথ) দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানার নশরতপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের উপর পশুর হাট বসানো বন্ধ বিষয়ে মৌখিক ভাবে বগুড়া জেলা প্রশাসক ও আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসাকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে পূর্বের ন্যায় নশরতপুর রেল ষ্টেশনের উপরে পশুর হাট বসায়। এব্যাপারে প্রতি বছর হাটের আগে বোনারপাড়া জিআরপি থানায় জানানো হলেও পুলিশ এসে হাট বন্ধ না করে উল্টো ইজারাদারের সাথে কথা বলে চলে যায়। বগুড়া রেলওয়ে ফাঁড়িতে জানানো হলে তারাও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। বগুড়া রেলওয়ে (পথ) সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলীকে জানানো হলেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের ফোন পেয়ে ভয়ে রেল সেটশনের উপর গরুর হাট বন্ধ করেনি। 

প্রতি বছর হাটের কলেবর বাড়ছে। পাশে ফাঁকা মাঠ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অনেক বড় বড় বয়লার ও চাতাল মিল। এসব জায়গায় নির্দিধায় গো হাট বসানো যায়। একটি আন্তনগর দ্রæতগামী ট্রেন ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলে। ট্রেন লাইনচ্যুত হলে হাজার হাজার যাত্রী ও হাটুরের প্রাণহানী ঘটবে। তখন এর দায় কে নিবে? প্রশ্ন এলাকার সচেতন মহলের। আশা করি এবার আর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা ও ইজারাদার নাই। হাট রেল স্টেশন, রেল ইয়ার্ড থেকে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিবেন রেলের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল জিএম ও লালমনিরহাট ডিআরএম। এব্যাপারে রেল উপদেষ্টা রেল সচিব ও মাননীয় প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

নশরতপুর গরুর হাট ইজারাদার লোকমান হোসেন বাবু জানান, গতকাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে নিষেধ করেছে রেলওয়ের জায়গার উপর ঝুঁকি নিয়ে গরুর হাট বসানো যাবে। কিন্তু আমাদের এলাকায় তেমন কোন পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে রেলের জায়গার উপর হাট বসানো হয়েছে। 

বগুড়া সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী (পথ) নারায়ন চন্দ্র এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমরা এব্যাপারে রেলওয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বগুড়া ডিসি মহোদয় ও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিক ভাবে সাময়িক এই কুরবানীর পশুর হাট স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। 

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন গতকাল সোমবার (১৯ মে) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুস্পষ্ট ভাবে হাট ইজারাদাকে বলা হয়েছে রেলওয়ের জায়গায় কোন কুরবানির পশুর হাট না বসানোর জন্য। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত