কাউনিয়ায় তিস্তার চরে মিষ্টি কুমড়ার ভালো দাম পেয়ে চাষীরা খুশি

তিস্তা নদীর চরে মিষ্টি কুমড়ার লতা পাতা ছড়িয়ে নিবিড় সবুজের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে ছোট-বড় নানা আকারের মিষ্টি কুমড়া। এরমধ্যে চাষিরা জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া তুলে কেউবা বিক্রি করেছেন আর কেউবা বেশী দাম পাওয়ার আশায় প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষন করে রেখেছেন। কৃষি বিভাগের মরামর্শে ও উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় তিস্তার চরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে কাউনিয়ায় দারিদ্র্যজয় করেছে শতাধিক পরিবার।

সরেজমিনে তিস্তা নদী বেষ্টিত উপজেলার তালুকশাহাবাজ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে নদীর পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছে প্রায় ১৫০টি পরিবার। এই পরিবারগুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই কৃষি বিভাগের পরামর্শে চরাঞ্চলের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আসছে। আর মিষ্টি কুমড়া চাষ করে তাদের অভাব-অনটন ঘুচেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে কুমড়া চাষকারী পরিবারগুলো এখন স্বাবলম্বী। কুমড়া চাষি স্বাধীন জানান, চরাঞ্চলে কুমড়া চাষ করে বছরে তারা এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। কুমড়া বিক্রির আয় থেকে তাদের সংসার ও সন্তানদের পড়াশুনার খরচ চলে। মাধবী রানী নামে এক চাষি জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ও তার স্বামী মিলে ১৬০টি গর্ত খুঁড়ে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করেন। প্রতিটি গর্তে ৩-৫টি করে মিষ্টি কুমড়া ধরেছিল, যার প্রতিটির ওজন প্রায় ৫ কেজি। তিনি আরও জানান, এবার কুমড়া চাষে তাদের খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো লাখ হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে কুমড়া চাষ করবেন তারা। তাদের মতো কাউনিয়ার আরও অন্তত ১৫০টি পরিবার কুমড়া চাষ করেছে। চাষিরা জানান, বড় হলে প্রত্যেকটি কুমড়ার ওজন ৩-১০ কেজি পর্যন্ত হয়। মৌসুমের শুরুতে কেজি প্রতি ১২-২০ টাকায় বিক্রি করেছেতারা। আর যারা প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষন করে রেখেছিলেন তারা বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ঢুসমরা চরের চাষি তাজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙ্গনে কৃষি জমি কমছে। তিস্তার চরাঞ্চলের জমি বছরের প্রায় ছয় থেকে সাত মাস পতিত থাকে। এ সময় তারা মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। কাউনিয়া কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার জানান, কেবল দেশ নয়, বিদেশেও মিষ্টি কুমড়ার বেপক চাহিদা রয়েছে। সেজন্য তিস্তার চরাঞ্চলের পতিত জমিতে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে কৃষকদের প্রনোদনার মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়া চাষ করানো হয়েছে। কৃষকরা ফলন দামও পেয়েছে ভাল। ১ হেক্টর জমিতে কুমড়ার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪শ মেঃটন, প্রতি হেক্টর জমিতে খরচ ধরা হয়েছে ১লাখ ৪০ হাজার টাকা, বিক্রি হবে প্রায় ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা অর্থাৎ প্রতি হেক্টর জমিতে কৃষকের লাভ হবে প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কাউনিয়ায় তিস্তার চরে দিন দিন কুমড়া চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কুমড়া চাষ করে চাষীরা আর্থিক ভাবে সাবলম্বি হচ্ছে।