রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপালনের বিকৃতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ

“তামাক নয়, ট্রেন চলুক!”

  প্রেস বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১৩:৪১ |  আপডেট  : ২৬ জুন ২০২৫, ১৬:৪৩

বাংলাদেশের জনগণের করের অর্থে পরিচালিত রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের শীর্ষ পর্যায়ের আমলারা যখন যাত্রীসেবা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রেল অবকাঠামো উন্নয়নের পরিবর্তে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ’ কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও পুরস্কার সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন সেটি নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক দায়িত্ব বিকৃতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় এবং গণসেবার সঙ্গে সরাসরি তামাশা—এমন ভাষায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন- “রেল চালানো রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাজ। তামাক নিয়ন্ত্রণ নয়। যখন ট্রেন সময়মতো চলে না, প্রকল্প থেমে থাকে, স্টাফ কম, যন্ত্রপাতি অকেজো—তখন সেই মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্তর্জাতিক মঞ্চে তামাক বিরোধী ‘নায়ক’ হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন—এটি দায়িত্বের অবমূল্যায়ন নয় কি? প্রেক্ষাপট: ডাবলিন সম্মেলনে রেল সচিব, কিন্তু রেল চলছে না! রেলপথ সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম ২৩২৬ জুন ২০২৫ ইং তারিখে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অনুষ্ঠিত গ্লোবাক টোবাকো কন্ট্রোল কনফারেন্স ২০২৫-এ অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় নাকি ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে’। এমনকি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে।

মনিরুজ্জামান মনির বলেন, যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিনের কাজ—রেল চালানো, যাত্রীসেবা উন্নয়ন, প্রকল্প তদারকি, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা— সে মন্ত্রণালয়ের সচিব যদি তামাকবিরোধী সেমিনার আর সম্মেলনে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে দেশের রেলসেবা ভেঙে পড়বে না তো কী হবে?

রেলওয়ের বাস্তবতা সংকট, ব্যর্থতা, জনভোগান্তি নিয়ে তিনি বলেন, রেলওয়ের বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন ট্রেনের সময়সূচি ভেঙে পড়ে, সিগন্যালিং ব্যবস্থা অচল বা ঝুঁকিপূর্ণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও দুর্নীতি, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অগণিত জনবল ঘাটতি, দখলদারদের কবলে রেলওয়ের বিপুল সম্পত্তি। এই ভয়াবহ বাস্তবতায়ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি ব্যস্ত থাকেন তামাক নিয়ন্ত্রণের সাফল্য প্রচারে, তাহলে প্রকৃত সমস্যার সমাধান কে করবে? রেল চলবে না, অথচ সচিব পদক নেবেন—এই প্রবণতা জনগণের সঙ্গে প্রহসনের নামান্তর।”

প্রশাসনিক বিভ্রান্তি ও অপ্রাসঙ্গিক দায়িত্ব চাপানোর কৌশল নিয়ে মনিরুজ্জামান মনির প্রশ্ন তোলেন, “রেল মন্ত্রণালয় কি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাব-ডিভিশন?, তামাক নিয়ন্ত্রণ একটি জনস্বাস্থ্য বিষয়—এর জন্য রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। রেলপথ মন্ত্রণালয় যদি সহযোগী ভূমিকা রাখে—যেমন: ট্রেনে ধূমপান নিষিদ্ধ, স্টেশনে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া—তাতেই যথেষ্ট। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা হল মূল দায়িত্ব ফেলে জনপ্রিয়তার পেছনে ছোটা। এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভারসাম্য নষ্ট করা এবং প্রশাসনের দায়িত্ববন্টনের মৌলিক চুক্তি লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে যদি কৃষি মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ব্যস্ত হয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্কুল পরিচালনা শুরু করে, তাহলে তা যেমন হাস্যকর, তেমনি ভয়ংকরও।”

অপ্রয়োজনীয় ‘তামাক কার্যক্রমে’ কর্মঘণ্টা ও সম্পদের অপচয় আখ্যায়িত করে তিনি অভিযোগ করেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তামাকবিরোধী সেমিনার, ফটোসেশন, পোস্টারিং, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, এবং আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ের পেছনে সচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, উপসচিবরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ফাইল তৈরি হয়, প্রতিবেদন পাঠানো হয়, পাওয়ার পয়েন্ট প্রস্তুত হয়, রেলওয়ের প্রকৌশল, ট্রাফিক, অপারেশন বিভাগের শত শত কর্মকর্তার মূল দায়িত্বে বিঘ্ন ঘটে, প্রতিবছর হাজার হাজার কর্মঘণ্টা অপচয় হয়।

তিনি প্রশ্ন রাখেন “রেল দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলে তার দায় কে নেবে—ব্লুমবার্গ ইনিশিয়েটিভ নাকি সচিব মহোদয়?”

মনিরুজ্জামান মনির বলেন, জনপ্রিয়তা সংস্কৃতি বনাম পেশাদারিত্ব। আজকের আমলাতন্ত্রের বড় সংকট হলো— জনসেবা নয়, আত্মপ্রচার, বিদেশ সফর, মিডিয়ায় হেডলাইন, পুরস্কার ও সম্মাননা নেওয়া—এসবই হয়ে উঠেছে মুল্যায়নের মানদণ্ড। আমরা চাই একটি পেশাদার রেল প্রশাসন—যেখানে সময়মতো ট্রেন চলে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, এবং কর্মকর্তারা সময় নষ্ট না করে মূল দায়িত্বে থাকেন।”

বিবৃতিতে মনিরুজ্জামান মনির  ৫ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেন—
১. রেলপথ মন্ত্রণালয়কে মূল কাজে ফেরানো হোক-তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। তামাক নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকুক, সহযোগী প্রতিষ্ঠানরা সীমিত ভূমিকা পালন করুক।
২. সচিব পর্যায়ের মূল্যায়নে ‘দায়িত্বচ্যুতি’ একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড হোক—কাজের বাইরে সময় নষ্ট হলে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত হোক।
৩. সুষ্ঠু ভাবে রেল পরিচালনায় রেলওয়ে মহাপরিচালকের ঐতিহাসিক ক্ষমতা পুনর্বহাল ও রেলওয়ে বোর্ড গঠন করা হোক।
৪. অপ্রাসঙ্গিক কর্মসূচিতে সম্পদ ব্যয়ের স্বাধীন নিরীক্ষা করা হোক, যেন অডিট রিপোর্টে সময়-অর্থ অপচয়ের চিত্র উঠে আসে।
৫. রেল সেক্টরের প্রকৃত সমস্যা—জনবল, ট্রেন সংখ্যা, আধুনিকায়ন, নিরাপত্তা ইত্যাদি—তথ্যভিত্তিক পদক্ষেপে সমাধানের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।

মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “তামাকবিরোধী ব্যানার নয়, সময়মতো ট্রেন, নিরাপদ ভ্রমণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নই হোক রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য পরিচয়। আজ জনগণ প্রশ্ন করছে—আমরা ট্রেন চেয়েছিলাম, সচিব সাহেব পেলেন পুরস্কার!

জনগণের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, ‘তামাক নয়, ট্রেন চলুক!’”

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত