দেশের জনগনের রায় ছাড়া কাউকে কোন মানবিক করিডোর নয়: সারজিস আলম

প্রকাশ: ৮ মে ২০২৫, ১৯:১৪ | আপডেট : ৮ মে ২০২৫, ২৩:৩৭

জাতীয় নাগরিক পার্টি - এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন বাংলাদেশের জনগনের রায় ছাড়া কাউকে মানবিক করিডোর নয়। তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে তার নিজ জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বার আউলিয়ার মাজারে ওরশ উপলক্ষে মেলা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনেক জায়গায় অবহেলা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো জায়গায় করিডোর দেয়ার পূর্বে এদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের রায় লাগবে। এর পূর্বে অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি করিডোরের নাম করে বিদেশি এজেন্ট এসেছে। বিভিন্ন দেশ ঢুকেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঢুকেছে। এই সুযোগ আমরা বাংলাদেশের হতে দেবো না। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকার একা নিতে পারে না।
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা ড. মুহম্মদ ইউনুসকে এটা ভুলে গেলে চলবে না হাজারো শহীদের জীবনের উপরে ও অর্ধলক্ষ আহতের রক্তের উপর এই সরকার দাঁড়িয়ে আছে। এই সরকার এখন পর্যন্ত একটা হত্যা মামলার বিচার করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত একটা মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এগুলো না করার পূর্বে নির্বাচনের কথা বললে শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে। নির্বাচনের সময় সীমা নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা শুধু মৌলিক সংস্কার চাই।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তিনি পালান নি তাকে পালাতে দেয়া হয়েছে। নয় মাস পরে উনি কিভাবে দেশ ছেড়ে যায়। এটা এই সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এর জন্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ড. আফিস নজরুলকে জবাবদিহি করা উচিত। আওয়ামীলীগের যে কয়েকজন সুবিধাভোগী বাংলাদেশে ছিলো তার মধ্যে তিনি একজন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি যা যা করেছেন তার অনেক উদাহরণ রয়েছে।
ভারত পাকিস্তান ইস্যুতে সারজিস বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দুই দেশে যুদ্ধে জড়ালে তৃতীয় দেশ হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখিন হবে বাংলাদেশ। আমরা কখনো চাই না প্রতিবেশি দুই দেশে যুদ্ধ লাগুক। তবে ধর্মীয় দিক থেকেও এই দুই দেশকে মাঝে মধ্যেই আমরা মুখোমুখি অবস্থানে যেতে দেখেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা ও কাজে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া পাই। তাদের সাথে কেবল আমাদের বাণিজ্যিক ও আন্তঃদেশিয় সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয় পরিবেশটিও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ^যুদ্ধ থেকে বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি তারা যখনই যুদ্ধে জড়িয়েছে পাশর্^বর্তী দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা যেন তাদের জায়গা থেকে ধর্মীয় উস্কানিকে যেন ব্যবহার না করে। হামলাটা কিন্তু ভারত আগে করেছে। আবার পেহেলগামে যখন হামলা হয়েছে কোন প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানকে দায়ী করা ঠিক নয়। পৃথিবীতে আমরা এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যেখানে নিজেরা প্লান করে ঘটিয়ে দেয়া হয় পরে দায় চাপানো হয়। তবে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী শক্তিদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এছাড়া এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পুনইনের যে চেষ্টা চলছে তা মেনে নেয়া হবে না। এরকম অপচেষ্টা সফল হতে দেয়া যাবে না। এই দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিতে হবে। এই জায়গায় অবহেলা করার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এই সময়ে বাংলাদেশের জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর ও মেট্রোপলিটনে এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে মিথ্যে মামলা। আমরা চাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নামে মামলা হবে বিচার হবে এবং দৃশ্যমান শাস্তি হবে। কিন্তু আমরা কখনো এটা চাই না যে একজন নিরাপরাধ মানুষের নামে মামলা হোক। যে দলের হোক নিরাপরাধ মানুষের নামে মামলা হলে যারা করছে তার সাথে আওয়ামীলীগের পার্থক্য কোথায়? আওয়ামীলীগ একই কাজ বিএনপি জামায়াতের সাথে করেছিল। আজকে তো আওয়ামীলীগ করছে না অন্য দল করছে। যারা করছে আওয়ামীলীগের মতোই কাজ করছে।
একটি মামলা সাজানোর পূর্বে একটি চক্র তৈরি হয়। প্রথম ধাপে ওই চক্রটি লিস্ট তৈরি করে নাম না দেয়ার শর্তে টাকা দাবি করে। দ্বিতীয় মামলায় নাম দিয়ে নাম কাটানোর কথা বলে টাকা দাবি করে। মামলা যখন আদালতে চলে যায় তখন আরেক ধাপে টাকা নেয়া হয়। এই মামলা বাণিক্য করছে রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। মামলায় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করা হয়। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার মামলা বাণিজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা এখন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।
আবার আওয়ামীলীগের দোসর, যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে আবার শেল্টার দিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে আওয়ামীলীগের একজন নেতা আরেকটি বড় দলের নেতার তত্ত্বাবধানে থাকছে। আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এর দায় নিতে হবে। এখন তাদের একশন নিতে হবে। কে ক্ষমতায় যাবে কে যাবে না। কার জনবল বেশি কার কম। এসব চিন্তা করে যদি তারা ছাড় দেয় তাহলে আগের অবস্থাই তৈরি হলো। তারা যদি একশন না নেন তাহলে মনে রাখবেন আপনার প্রতি যে জনমত তা পাল্টাতে বেশি সময় লাগবে না।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত