ভোট কারচুপির অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় কাফনের কাপড় পরে জেলা বিএনপির কার্যালয় ঘেরাও

  কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ

প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩৬ |  আপডেট  : ১ জুলাই ২০২৫, ১৯:২৪

কাফনের কাপড় পরে কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয় ঘেরাও করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

সদ্য অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে এই কর্মসূচি পালন করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার ও তার কর্মী-সমর্থকরা।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন জেলা বিএনপির কার্যালয় ঘিরে প্রবেশ পথের সামনে অবস্থান নেন দলটির কয়েকশ নেতাকর্মী। এসময় বেশ কয়েকজন কাফনের কাপড় পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় শুয়ে পড়েন।

বিক্ষোভকারীরা কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে নানা স্লোগান দেন। তারা ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই করো’, ‘অবৈধ নির্বাচন মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় বক্তব্যে ভোট কারচুপির জন্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুবউদ্দিন আহমেদ ও সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকারকে দায়ী করেন তারা।

কর্মসূচির বিষয়ে কাজল মাজমাদার বলেন, জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সমস্যার সমাধান না করলে আমরা হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

এর আগে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে গত রোববার কুষ্টিয়া এন এস রোডে একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন কাজল মাজমাদার। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সেখানে খবর পৌঁছায় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের টয়লেটে সভাপতি পদে পরাজিত প্রার্থী আখতারুজ্জামান ওরফে কাজল মাজমাদারের চেয়ার প্রতীকের সিলমারা বেশ কিছু ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দুপুর থেকেই দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

ওই সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, নির্বাচন ঘিরে জনমনে নানা সংশয় থাকলেও আমরা দলের বৃহত্তর স্বার্থে এবং গণতন্ত্রের অনুশীলনের জন্য এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের আশঙ্কাকে সত্যি করে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে ও নানামুখী বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

এই অনিয়ম ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং পুনরায় নির্বাচনের দাবি করছি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, ভোটের সারাদিন কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। ভোট গণনার সময় কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ফলাফলের পরই তাদের যত অভিযোগ। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে শতভাগ স্বচ্ছ একটি নির্বাচন করেছি। এখানে কারচুপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। যেসব অভিযোগে তারা আন্দোলন করছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

এর আগে শুক্রবার (২৭ জুন) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল শেষে ভোটে সভাপতি পদে একে বিশ্বাস বাবু ও সাধারণ সম্পাদক পদে কামাল উদ্দিন বিজয়ী হন। পরে কাজল মাজমাদার ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট পুনর্গণনার আহ্বান জানান। পরদিন শনিবার পুনর্গণনা শেষে চার ভোট বেড়ে কাজলের ভোটের সংখ্যা হয় ৫৯৯। অন্যদিকে জয়ী প্রার্থী বাবুর ভোট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৬১১।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক এবং প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কেন্দ্র থেকে প্রথমে দুই সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়ায় কমিটি ঘোষণার পরের দিন থেকেই কমিটি বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে দলটির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের একটি অংশ। সর্বশেষ গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত পৌর বিএনপির নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত