যৌথবাহিনীর অভিযানে ৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘ফাইলা পাগলার মেলা’ বন্ধ

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৩ | আপডেট : ৬ মে ২০২৫, ১৯:৩১

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় ‘ফাইলা পাগলার মেলা’ বন্ধ ঘোষণা করেছে যৌথবাহিনী। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় মেলায় আসা ভক্ত ও ব্যবসায়ীরা।
রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেল ৪ টায় উপজেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত ফাইলা পাগলার মাজার প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ অভিযান শেষে মেলা বন্ধের ঘোষণা দেন। অভিযানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনি, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এটিএম ফজলে রাব্বি প্রিন্স, সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার বিকেলে ফাইলা পাগলার মেলায় যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ব্যবসায়ী ও আগত দর্শনার্থীদের মেলাস্থল ত্যাগ করতে ১৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অপরদিকে দোকানপাট সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের দুই ঘণ্টা সময় দেয় যৌথ বাহিনী।
১৯৪৯ সালে উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে প্রথম ফাইলা পাগলার মেলা শুরু হয়। প্রতি বছরের হিজরি রজব মাসের প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হয়ে মাসব্যাপী চলে এর কার্যক্রম। পূর্ণিমার রাতে হয় বড় মেলা। তবে মানতকারী ভক্ত দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে সারা মাস। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার লোকজন ব্যান্ডপার্টিসহ মানত করা মোরগ, খাসি, গরুসহ নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়। মাজারের চারপাশের প্রায় এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লোকজন মোরগ, গরু-খাসি জবাই করে মানত পূরণ করে।
এদিকে, মাজার ঘেঁষেই পাগল ভক্তদের বসার আস্তানা। সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করা হত। এ সুযোগে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত ও যুবকেরা অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক সেবন করে এখানে।
এতে রোববার বিকেলে যৌথবাহিনী মেলা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে। পরে মেলায় আসা লোকজন দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এসময় মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন। পরে তারা মালামাল সরাতে দুইদিন সময় যান।
মেলায় আসা ভক্তরা জানান, বহু বছরের পুরাতন এই ফাইলা পাগলার মেলা। প্রতিবছরই এখানে মেলা হয়। মেলায় কিছু মানুষজন বা পাগলরা নেশা করে ঠিক, তাই বলে মেলা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। অনেক ভক্ত মনোবাসনা পূরণের জন্য ফাইলা পাগলার মাজারে আসে। প্রশাসনের উচিত মেলায় যাতে নেশা জাতীয় পণ্য নিয়ে আসতে না পারে সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া।
মাজার কমিটির সভাপতি কবির হাসান বলেন, একটি মহল মেলাটি বন্ধ করার জন্য পাঁয়তারা করছে। মাজারের পাশ থেকে পাগল ভক্তদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেলাটি বন্ধ করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনি বলেন, মেলার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ছিল। আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছি। এ কারণে মেলাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে মাজারে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে মাজারের খাদেমসহ আটজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন। হামলার পর কয়েক বছর মেলায় লোকজন কম আছে। ধীরে ধীরে ভয় কেটে যাওয়ায় মেলায় লোকজন বেশি আসতে শুরু করে।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত