পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরে ঈদের পর আন্দোলনের হুমকি

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১৪:৪৭ | আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ২৩:৩৫

আসন্ন ঈদুল আজহার আগেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদী ইস্যু কাশ্মির সংকটের শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরভিত্তিক সুশীল সংস্থাগুলোর জোট জম্মু কাশ্মির জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (জেকেজাক)। ইসলামাবাদ, নয়াদিল্লি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এই দাবিতে কর্ণপাত না করে, তাহলে ঈদের পরে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে জেকেজাক।
রোববার আজাদ কাশ্মিরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের লাল চক এলাকায় বিশাল এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেকেজাক। সেই সমাবেশে জোটের অন্যতম জ্যেষ্ঠ ও শীর্ষ নেতা শওকত নওয়াজ মির এই আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
সমাবেশে শওকত নওয়াজ মির বলেন, “জাতিসংঘের সনদ অনুসারে এবং জনগণের সামষ্টিক মতামতের ভিত্তিতে অবশ্যই কাশ্মির ইস্যুর সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তৎপর হতে হবে এবং সেটি হতে হবে আগামী ৭ জুনের আগেই।”
“যদি তা না ঘটে কিংবা সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত কাশ্মিরিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় অথবা যদি ফের যুদ্ধ শুরুর পাঁয়তারা চলে, তাহলে অখণ্ড জম্মু-কাশ্মিরের সকল ইউনিটের (ভারত ও পাকিস্তান উভয় অংশ) জনগণ দুই কাশ্মিরের মধ্যকার রক্তাক্ত সীমান্ত রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল-এলওসি) শান্তিপূর্ণভাবে অচল করে দেবে।”
“আমাদের আজকের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ। তবে শাসকদের হুঁশয়ারি দিয়ে বলছি, জম্মু-কাশ্মির জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি যদি বিক্ষোভ শুরু করে, তাহলে শাসকরা কেউ পালানোর পথ পাবেন না।”
১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের সময় থেকে কাশ্মির সংকটের শুরু। দুই রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের সময় জম্মু-কাশ্মির কোন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হবে— জম্মু-কাশ্মিরের শেষ রাজা হরি সিংয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন ব্রিটেনের শাসকরা। কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনায় হরি সিং জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মির স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে; কোনো দেশের অংশ হবে না।
কিন্তু ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর জম্মু-কাশ্মির দখলে অভিযান শুরু করে পাকিস্তান এবং জম্মু- কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের অনতিদূরে পৌঁছে যায়। এই পরিস্থিতিতে রাজা হরি সিং জম্মু-কাশ্মিরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।
হরি সিংয়ের স্বাক্ষরের পর অভিযানে নামে ভারতের সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেই থেকে জম্মু-কাশ্মিরের মোট ভূখন্ডের ৪৩ শতাংশ ভারতের এবং ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানের দখলে রয়েছে। বাকি ২০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের হাতে। চীনের অধিকৃত ওই অঞ্চলটি সিয়াচেন নামে পরিচিত।
ভারতে অন্তভুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দিয়েছিলেন। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মিরের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের লোকজন বা কোনো বিদেশি জম্মু-কাশ্মিরে জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পার্লামেন্টে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয় নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসীন বিজেপি। ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মির ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পাকিস্তান অবশ্য ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারা পুনর্বহালের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও চেষ্টা করেছে ইসলামাবাদ। কিন্তু সেসব কোনো কাজে আসেনি।
সা
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত