শিবগঞ্জে শিকলে বন্দী অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১৫:৪৫ | আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ১৭:০৬

বগুড়ার শিবগঞ্জে শিকলে বন্দী অবস্থায় সাইফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মৃত সাইফুল উপজেলা সদর ইউনিয়নের মেদনিপাড়া গ্রামের জামালের পুত্র। গত বৃহস্পতিবার নিজ বাড়ি থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি তার মৃত্যু স্বাভাবিক। এ ঘটনায় ওই এলাকায় রহস্যেও সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ছাইফুল একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্তুু হঠাৎ ব্রেনের সমস্যার কারণে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এর পরিপেক্ষিতে গত রমজান মাস থেকে তাকে ঘরের ভিতরে হাত-পা শিকল ও ডান্ডা দিয়ে বেঁধে রাখে তার পরিবারে সদস্যরা। এমনকি পরিবারের সদস্যরা তাকে বাইরের কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দিতেন না। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বিষয়টি জানলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
পার্শ্ববর্তী বাড়ির রাশেদা বিবি বলেন ঘরে বন্দী করা অবস্থায় সে আমাদেন ডাকাডাকি করে বলতো আমাকে পানি খাওয়াও, আমাকে দুধ খাওয়াও কিন্তু কাউকেই তার সাথে দেখা করতে বা পানি বা অন্য কিছু খাওয়াতে দিত না তার বাপ, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা। গত পাঁচ দিন যাবত তার কোন হাক ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম না আমরা। আমার মনে হয় এর মধ্যেই সে মারা গিয়েছে। মৃত্য সাইফুলের জ্যাঠাতো ভাই আনিছার বলেন,তাকে চিকিৎসা না করে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুঁকে মেরে ফেলেছে, আমরা যদি কখনো তাকে দেখতে যাইতাম বা তাকে কোন কিছু খাবার দিতে যাইতাম তার বাবা মা বলতো এ খাবার খেয়ে যদি কোন সমস্যা হয় তার দায়ভার কিন্তু তোমাদেরকে নিতে হবে আমি মনে করি তাকে চিকিৎসা না করে খাবার না দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি( ওয়ার্ড মেম্বার) এর ছেলে শাফিউল আলম শাকিল বলেন সাইফুল ইসলাম কখনোই আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করত না সেটা ভালো থাকা অবস্থায় অথবা যখন মানসিক বিকৃতি ঘটে তখনও আমার মনে হয় এই দেড় মাস ধরে ঘরে বন্দি থাকার কারণেই অসুস্থ হয় তাকে চিকিৎসা না করার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।এলাকাবাসীএটিকে “অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক মৃত্যু” বলে সন্দেহ করছেন।
এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার পেছনে যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অবহেলা থাকে, তবে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এদিকে মৃত সাইফুলের ভাই শাহিনুর ইসলাম বলেন আমার ভাই একজন ভালো ছাত্র ইংলিশে ভালো পারদর্শী ছিল, ইংলিশে কথা বলতো। ২০০৭ সালে আমি বিদেশে ছিলাম তখন সে পুলিশে ভাইবা দিয়ে পুলিশে চাকুরী পেয়েছিল, হঠাৎ করে ব্রেনের সমস্যা হওয়ার কারণে আর চাকরি করতে পারে না সে। আমরা তাকে বহুবার পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছে চিকিৎসা দেওয়ার পরে সে সুস্থ হয়ে ৬ মাস ১ বছর ভালো থাকে পরে আবারো অসুস্থ হয়। চিকিৎসা দিলে ভালো হয়। যখন পাগল হয় তখন বিভিন্ন লোকদেরকে মারধর করে। এইবার রোজার মধ্যে সে অসুস্থ বেশি হলে আমরা তাকে ঘরে বন্দি করে রাখি। আমি নিজেই তাকে নিয়মিত ওষুধ ও খাবার খাওয়াতাম। মৃত্যুর চার-পাঁচ দিন আগে থেকে হঠাৎ করে খাওয়া-দাওয়া কমে যায়। মৃত্যুর দিনে সকালে আমি খাবার- ঔষধ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখি সে মৃত্যুবরণ করেছে শাহিনুর ইসলাম বলেন এটা স্বাভাবিক মৃত্যু এটা কোন অস্বাভাবিক মৃত্যু নয়।
শিবগঞ্জ থানা তদন্ত অফিসার আব্দুস শুকুর বলেন লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে এবং প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত